Saturday, March 30, 2013

তসাউফের প্রথম ধাপ তাওবা

- 0 comments
 তসাউফের প্রথম ধাপ  তাওবা

 হাদীসে আছে যে তাওবা করী এমন যার কোন গুনাহ বাঁকী থাকেনা।
”আপনার পালনকর্তা জানেন, আপনি এবাদতের জন্যে দন্ডায়মান হন রাত্রির প্রায় দু’তৃতীয়াংশ, অর্ধাংশ ও তৃতীয়াংশ এবং আপনার সঙ্গীদের একটি দলও দন্ডায়মান হয়। আল্লাহ দিবা ও রাত্রি পরিমাপ করেন। তিনি জানেন, তোমরা এর পূর্ণ হিসাব রাখতে পার না। অতএব তিনি তোমাদের প্রতি ক্ষমা পরায়ন হয়েছেন। কাজেই কোরআনের যতটুকু তোমাদের জন্যে সহজ, ততটুকু আবৃত্তি কর। তিনি জানেন তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ অসুস্থ হবে, কেউ কেউ আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধানে দেশে-বিদেশে যাবে এবং কেউ কেউ আল্লাহর পথে জেহাদে লিপ্ত হবে। কাজেই কোরআনের যতটুকু তোমাদের জন্যে সহজ ততটুকু আবৃত্তি কর। তোমরা নামায কায়েম কর, যাকাত দাও এবং আল্লাহকে উত্তম ঋণ দাও। তোমরা নিজেদের জন্যে যা কিছু অগ্রে পাঠাবে, তা আল্লাহর কাছে উত্তম আকারে এবং পুরস্কার হিসেবে বর্ধিতরূপে পাবে। তোমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা কর। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়ালু। (৭৩: ২০)
আল্লাহ তাআলার দরবারে বান্দার তাওবা করা অধিক পছন্দনীয়। মানুষ অপরাধ করার পর আল্লাহ তাআলার নিকট তাওবা করা ও গুনাহের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করাকে তিনি অত্যধিক পছন্দ করেন। আল্লাহ তাআলা তাওবা কবুল করেন এবং তাওবার মাধ্যমে বান্দাকে পুত পবিত্র করেন। তবে তাওবা কি বা তাওবা কবুল হওয়ার জন্য শর্তাবলী কি তা আমাদের জানা থাকা জরুরি। তাই নিম্নে এ বিষয়ে একটি সংক্ষিপ আলোচনা তুলে ধরা হল।
তাওবা কাকে বলে?
وَقُل لِّلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَىٰ جُيُوبِهِنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا لِبُعُولَتِهِنَّ أَوْ آبَائِهِنَّ أَوْ آبَاءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوْ أَبْنَائِهِنَّ أَوْ أَبْنَاءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوْ إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي أَخَوَاتِهِنَّ أَوْ نِسَائِهِنَّ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُنَّ أَوِ التَّابِعِينَ غَيْرِ أُولِي الْإِرْبَةِ مِنَ الرِّجَالِ أَوِ الطِّفْلِ الَّذِينَ لَمْ يَظْهَرُوا عَلَىٰ عَوْرَاتِ النِّسَاءِ وَلَا يَضْرِبْنَ بِأَرْجُلِهِنَّ لِيُعْلَمَ مَا يُخْفِينَ مِن زِينَتِهِنَّ وَتُوبُوا إِلَى اللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَ الْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ ﴿النور: ٣١﴾
ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাযত করে। তারা যেন যা সাধারণতঃ প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষ দেশে ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুস্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক অধিকারভুক্ত বাঁদী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ, ও বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কারো আছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও। (২৪: ৩১)

খারাপ কাজ-গুনাহ, পাপচার, অন্যায় অবিচার ও আল্লাহর নাফরমানি হতে ফিরে এসে, বান্দা নেক কাজ করার মাধ্যমে তার প্রভুর দিকে ফিরে আসাকে তাওবা বলা হয়। অনেক অজ্ঞ বা মূর্খ লোকেরা মনে করে তাওবা শুধু মাত্র খারাপ কাজ বা গুনাহের কাজ থেকে ফিরে আসার দ্বারাই হয়ে থাকে। তাদের এ ধরনের ধারণা মোটেও ঠিক না। বরং, এখানে সঠিক, নির্ভুল ও গ্রহণযোগ্য কথা হল, যে সব নেক আমল করার জন্য আল্লাহ তায়ালা নির্দেশ দিয়েছেন তা ছেড়ে দেয়াও গুনাহ। যারা এ সব নেক আমলগুলো পালন করা ছেড়ে দেয় তাদের অবশ্যই তা ছেড়ে দেয়া হতে তাওবা করা এবং ফিরে আসা, নিষিদ্ধ কাজ করা থেকে তাওবা করা হতে আরো বেশী গুরুত্বপুর্ণ।
অধিকাংশ মানুষ আল্লাহর অনেক আদেশ, অন্তরের কার্যাদি, অঙ্গপ্রত্যঙ্গের আমল বা যিকির ছেড়ে দেয়, অথচ তারা জানেই না যে এগুলো সবই আল্লাহর আদেশের অন্তর্ভুক্ত এবং এ গুলো ছেড়ে দেয়া বা এ সব আমল পালন করা হতে বিরত থাকা অপরাধ ও গুনাহ। অথবা জানা থাকলেও তারা তার পাবন্দি করে না। এবং এগুলো ছেড়ে দেয়াতে যে, তার পাপ হচ্ছে, তা থেকে ফিরে আসা ও তাওবা করা যে গুরুত্বপূর্ণ বা অতীব জরুরী তা তারা বিশ্বাস করে না। ফলে সত্যিকার জ্ঞান না থাকার কারণে তারা হয়ত পথভ্রষ্টদের দলভুক্ত হয় অথবা অভিশপ্ত সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত হয়। সত্যকে সত্য বলে জানা সত্ত্বেও তা হতে বিরত থেকে তারা মন্দ পরিণতির অধিকারীই রয়ে গেল।
وَوَصَّيْنَا الْإِنسَانَ بِوَالِدَيْهِ إِحْسَانًا حَمَلَتْهُ أُمُّهُ كُرْهًا وَوَضَعَتْهُ كُرْهًا وَحَمْلُهُ وَفِصَالُهُ ثَلَاثُونَ شَهْرًا حَتَّىٰ إِذَا بَلَغَ أَشُدَّهُ وَبَلَغَ أَرْبَعِينَ سَنَةً قَالَ رَبِّ أَوْزِعْنِي أَنْ أَشْكُرَ نِعْمَتَكَ الَّتِي أَنْعَمْتَ عَلَيَّ وَعَلَىٰ وَالِدَيَّ وَأَنْ أَعْمَلَ صَالِحًا تَرْضَاهُ وَأَصْلِحْ لِي فِي ذُرِّيَّتِي إِنِّي تُبْتُ إِلَيْكَ وَإِنِّي مِنَ الْمُسْلِمِينَ ﴿الأحقاف: ١٥﴾
আমি মানুষকে তার পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহারের আদেশ দিয়েছি। তার জননী তাকে কষ্টসহকারে গর্ভে ধারণ করেছে এবং কষ্টসহকারে প্রসব করেছে। তাকে গর্ভে ধারণ করতে ও তার স্তন্য ছাড়তে লেগেছে ত্রিশ মাস। অবশেষে সে যখন শক্তি-সামর্থে?480; বয়সে ও চল্লিশ বছরে পৌছেছে, তখন বলতে লাগল, হে আমার পালনকর্তা, আমাকে এরূপ ভাগ্য দান কর, যাতে আমি তোমার নেয়ামতের শোকর করি, যা তুমি দান করেছ আমাকে ও আমার পিতা-মাতাকে এবং যাতে আমি তোমার পছন্দনীয় সৎকাজ করি। আমার সন্তানদেরকে সৎকর্মপরায়ণ কর, আমি তোমার প্রতি তওবা করলাম এবং আমি আজ্ঞাবহদের অন্যতম। (৪৬: ১৫)

কোন মানুষই অপরাধ ও ত্রুটিমুক্ত নয়। আর সমস্ত আদম সন্তানই ভূলের মধ্যে নিমজ্জিত রয়েছে। আর উত্তম ব্যক্তি হল আল্লাহর কাছে তওবাকারী। আর মহান আল্লাহ তা‘আলা কুরআনের মাধ্যমে এবং মহানবী (সা.) হাদীসের মাধ্যমে গুনাহ থেকে ক্ষমা প্রার্থনা ও তওবা করার প্রতি উৎসাহিত করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন যে :
]قُلْ إِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ مِثْلُكُمْ يُوحَى إِلَيَّ أَنَّمَا إِلَهُكُمْ إِلَهٌ وَاحِدٌ فَاسْتَقِيمُوا إِلَيْهِ وَاسْتَغْفِرُوهُ[(فصلت: من الآية6)
অর্থাৎ, হে রাসূল আপনি বলুন নিশ্চয় আমি তোমাদের মতই একজন মানুষ, আমার নিকট ওহী (প্রত্যাদেশ) পাঠানো হয়। আর নিশ্চয়ই তোমাদের ইলাহ একজন মাত্র। তোমরা তাঁর পথেই স্থির ও সুদৃঢ় থাক এবং তারই কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর। আল্লাহ আরো বলেন :
]وَتُوبُوا إِلَى اللَّهِ جَمِيعاً أَيُّهَا الْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ[(النور: من الآية31)
অর্থাৎ হে মুমিনগণ তোমরা সকলে মিলে আল্লাহর কাছে তওবা কর। আশা করা যায় তোমরা সফল হতে পারবে।
উল্লেখিত আয়াতটি মদীনায় অবর্তীণ হয়েছে এ আয়াতে আল্লাহ তায়ালা শুধু ঈমানদার নয় বরং তখনকার সময়ের সবচেয়ে উত্তম মাখলুক যারা জিহাদ, সবর, হিজরতসহ যাবতীয় নেক কাজে কিয়ামত পর্যন্তের জন্য ইতিহাস হয়ে থাকবেন, তাদেরকে তাওবা করার নির্দেশ দেন এবং তারপর তিনি তাওবাকে সফলতা ও কামিয়াবী লাভের কারণ নির্ধারণ করেন। সুতরাং, কামিয়াবী বা সফলতা পাওয়ার একমাত্র উপায় হল আল্লাহর নিকট খালেস তাওবা করা। আল্লাহর দরবারে তাওবা করা ও যাবতীয় গুনাহ হতে ক্ষমা প্রার্থনা ছাড়া কোন ঈমানদারই সফল হতে পারে না। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন :
]يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا تُوبُوا إِلَى اللَّهِ تَوْبَةً نَصُوحاً عَسَى رَبُّكُمْ أَنْ يُكَفِّرَ عَنْكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ وَيُدْخِلَكُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَار[(التحريم: من الآية8)
অর্থাৎ ওহে যারা ঈমান এনেছ তোমরা তোমাদের রবের নিকটে একনিষ্ঠতার সাথে কবুলযোগ্য তওবা কর। আশা করা যায়, তোমাদের রব তোমাদের থেকে সকল গুনাহ মোচন করবেন এবং তোমাদেরকে এমন জান্নাতে প্রবেশ করাবেন যার তলদেশ দিয়ে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত হয়। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন :
]إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ التَّوَّابِينَ وَيُحِبُّ الْمُتَطَهِّرِينَ[(البقرة: من الآية222)
অর্থাৎ নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা তওবাকারীদেরকে ভালবাসেন এবং তিনি পবিত্রা অর্জনকারীদেরকেও ভালবাসেন।
আম্মার ইবন ইয়াসার (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, ‘নবী করীম (সা.) বলেন যে : ‘‘হে মানবজাতি তোমরা আল্লাহর কাছে তওবা কর এবং আমি প্রতিদিনে একশতবার তওবা করে থাকি।’’ (মুসলিম)
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন আমি রাসূল (সা.) কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন যে : ‘‘নিশ্চয় আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি এবং তার কাছে দৈনিক সত্তরবারের বেশী তওবা করি।’’ (বুখারী)
আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, রাসূল (সা.) বলেছেন : ‘‘আল্লাহ তার বান্দাহর তওবার কারণ খুব খুশি হন। যখন বান্দাহ তার কাছে তওবা করে তখন বান্দাহ যে অবস্থায় থাকুক না কেন আল্লাহ তার ডাকে সাড়া দেন।’’
আর আনাস এবং ইবন আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, নিশ্চয় রাসূল (সা.) বলেন যে : ‘‘যদি আদম সন্তানের জন্য স্বর্ণ দ্বারা নির্মিত উপত্যকাও হয় তার পরেও তার কাছে দুটি স্বর্ণের উপত্যকা হওয়া ভাল মনে করবে। তারপরও তার মুখ কখনো পূর্ণ হবেনা। তবে মাটি দ্বারা পূর্ণ হবে। আর আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেক তওবাকারীকেই ক্ষমা করে দেন।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
অতঃপর তওবা হল আল্লাহর অবাধ্যচারণ থেকে ফিরে গিয়ে আল্লাহর আনুগত্য পথের দিকে ধাবিত হওয়া। কেননা আল্লাহ হলেন প্রকত ইবাদত পাবার যোগ্য। আর প্রকৃত ইবাদত হল মাবুদের জন্য তার প্রেম ভালবাসায় ও মহত্বের বিনয়ী হওয়া। আর দ্রুত তওবা করা আবশ্যক। বিলম্ব করা কোনক্রমেই বৈধ নয়। কেননা আল্লাহ তা‘আলা এবং তার রাসূল (সা.) তওবা করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। আর তাই আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সকল নির্দেশই দ্রুত দ্রুততার সাথে সাথে পালন করা উচিৎ। কেননা বান্দাহ জানেনা যে, বিলম্বে কোন কাজ করলে তা কি অর্জন করা যাবে কি-না? কেননা হঠাৎ তার মৃত্যু এসে পড়তে পারে। অতঃপর সে তওবা করার সুযোগ পাবে না। আর অন্যায় কাজ বারবার করার মাধ্যমে অন্তর কঠিন হয়ে যায় এবং আল্লাহর হুকুম পালনে দূরত্বে অবস্থান করে। আর তার ঈমান দূর্বল হয়ে যায়। কেননা ঈমান আল্লাহর আনুগত্যের মাধ্যমে বৃদ্ধি পায় এবং অন্যায় করার মাধ্যমে ঈমান কমে যায়। কেননা বারবার অপরাধ করার দ্বারা অপরাধ করার প্রতি মানসিকতা তৈরী হয়। আর যখন কোন আত্মা কোন বস্তুর প্রতি সীমালংঘন করে ফেলে তখন তার থেকে পৃথক হওয়া কঠিন হয়ে যায়। এবং তখন তার উপর শয়তান বিজয়ী হয়ে বসে। আর অন্যান্য বড়বড় অপরাধ করার প্রতি অনুপ্রেরণা যোগায়। এ জন্যইতো ওলামায়ে কেরাম বলে থাকেন যে, নিশ্চয় সকল ধরণের অপরাধ কুফুরী বৃদ্ধি করে। ফলে মানুষ ধাপে ধাপে একটি অপরাধ থেকে আরেকটি অপরাধে লিপ্ত হয়ে যায়। এমনকি সে দ্বীন থেকে দূরে সরে চলে যায়।
মোট কথা, তাওবা বান্দার জীবনের শেষ ও শুরু। তবে তার প্রয়োজন যেমনিভাবে জীবনের শেষাংশে জরুরী অনুরূপভাবে জীবনের প্রথমাংশেও জরুরী।

তাওবাতুন নাছুহা কি?

التَّائِبُونَ الْعَابِدُونَ الْحَامِدُونَ السَّائِحُونَ الرَّاكِعُونَ السَّاجِدُونَ الْآمِرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَالنَّاهُونَ عَنِ الْمُنكَرِ وَالْحَافِظُونَ لِحُدُودِ اللَّهِ وَبَشِّرِ الْمُؤْمِنِينَ ﴿التوبة: ١١٢﴾

তারা তওবাকারী, এবাদতকারী, শোকরগোযার, (দুনিয়ার সাথে) সম্পর্কচ্ছেদকারী, রুকু ও সিজদা আদায়কারী, সৎকাজের আদেশ দানকারী ও মন্দ কাজ থেকে নিবৃতকারী এবং আল্লাহর দেওয়া সীমাসমূহের হেফাযতকারী। বস্তুতঃ সুসংবাদ দাও ঈমানদারদেরকে। (৯: ১১২)

 

মনে রাখতে হবে তাওবা হল মানুষের অন্তরের প্রচেষ্টা। অর্থাৎ, মানুষের অন্তরে অপরাধবোধ জাগ্রত হওয়া এবং নিজেকে গুনাহের কারণে অপরাধী মনে করা যা বান্দার অন্তরে কখনো কখনো জাগ্রত হয়ে থাকে। অন্তরে এ ধরনের অনুভূতি জাগ্রত হওয়ার অর্থই হল তাওবা বা ক্ষমা প্রার্থনা ও আল্লাহর দিকে ফিরে যাওয়া। আর আত্মাকে সকল প্রকার গুনাহ, অন্যায়, পাপাচার ইত্যাদি হতে বিরত রাখার মাধ্যমে একজন বান্দা সফলকাম হতে পারে।
জনৈক আলেম তাওবার সংজ্ঞায় বলেন, আল্লাহর অসোন্তোষ ও পাকড়াওয়ের ভয়ে গুনাহের ইচ্ছা ছেড়ে দেয়া এবং সমপর্যায়ের যে সব গুনাহ তার দ্বারা সংঘটিত হয়েছে, তার থেকে ফিরে এসে আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করা। শুধু সংঘটিত গুনাহ নয়, যদি কোন গুনাহের ইচ্ছা মনে জাগ্রত হয়ে থাকে তা থেকে ফিরে আসাও এক ধরনের তাওবা। মনে রাখতে হবে তাওবা শুধু করলেই কবুল হয়ে যায় না। মুখে ক্ষমা প্রার্থনা দ্বারাই আল্লাহ তাআলা ক্ষমা করে দেন না। তাওবা কবুল হওয়া বা শুদ্ধ হওয়া জন্য একাধিক শর্ত রয়েছে। শর্তগুলো পূরণ করা তাওবা কবুল হওয়া পূর্ব শর্ত। এ শর্তগুলোর বাস্তাবায়ন ছাড়া তা কবুল হয় না।

তাওবা কবুলের জন্য পাঁচটি শর্ত

পাপের সম্পর্ক যদি আল্লাহর সাথে হয়, তাহলে তা থেকে তওবা করতে হলে তার মাঝে তিনটি শর্ত বিদ্যমান থাকতে হবে। আর পাপের সম্পর্ক যদি মানুষের অধিকার ক্ষুন্ন করার সাথে সম্পর্কীয় হয় তবে সে পাপ থেকে তওবা করতে হলে তার মাঝে ৪টি শর্ত বিদ্যমান থাকতে হবে। তাহলে বুঝা গেল, তাওবার শর্ত তিনটি বা চারটি। কিন্তু চুল-চেরা বিশ্লেষণ করলে তাওবার শর্ত হয় মোট ৫টি।
প্রথম শর্ত : তাওবাটি এখলাসের সাথে হতে হবে। কেবলমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য তাওবা হতে হবে। লোক দেখানো বা মানুষের সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য হলে হবে না। আল্লাহর সন্তুষ্টি, আখেরাত লাভ এবং আল্লাহর কাছ থেকে ক্ষমা পাবার আশায় তাওবা করতে হবে।
তওবা একনিষ্ঠতার সাথে হওয়া চাই এবং আল্লাহর প্রতি ভালবাসা ও তার মহত্বের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা এবং তাঁর কাছে কল্যাণের আশা করা এবং তাঁর শাস্তি থেকে ভয় পাওয়া। এ তওবা দ্বারা পার্থিব কোন বস্তু কামনা অথবা কোন সৃষ্টজীবের কাছে কিছু প্রার্থনা না করা চাই। আর যদি কেউ এমনটি করে তাহলে তার তওবা কবুল হবে না। কেননা সে অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে তওবা করেছে। সে আল্লাহর কাছে তওবা করেনি এবং সে একটা নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে তওবা করেছে।
দ্বিতীয় শর্ত : কৃত পাপকর্মের প্রতি আন্তরিকভাবে লজ্জিত বা অনুতপ্ত হতে হবে। কৃত কর্মের প্রতি অনুতপ্ত এবং মর্মাহত হতে হবে। তাওবার সাথে সাথে যদি লজ্জিত হয়, তাহলে বুঝা যাবে যে, লোকটি সত্যি সত্যি তাওবা করেছে।
তার পুর্বকৃত গুনাহর জন্য লজ্জিত ও হীন হওয়া চাই এবং সে এই আশা করবে যে, তার এই তওবা কবুল না হলে সে কিছুই অর্জন করতে পারবে না। আর তার এই তওবা হবে আল্লাহর ডাকে সাড়া দেয়া এবং তার কৃত অপরাধের শাস্তির ভয় স্মরণ করা। তাহলে তার তওবা হবে একান্ত বিশ্বাসের সাথে এবং চাক্ষুষের সাথে।
তৃতীয় শর্ত : পাপের কারণে যার অধিকার ক্ষুন্ন করা হয়েছে, তার অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। এবং ভবিষ্যতে আর এ পাপকর্মে লিপ্ত হবেনা বলে দৃঢ় সংকল্প করতে হবে। পাপকর্মটি যদি ফরজ বা ওয়াজিব লঙ্ঘণ সংক্রান্ত হয়, তবে সাথে সাথে তাতে ফিরে যেতে হবে। যেমন: কোন ব্যক্তি যাকাত আদায় করেনি। এখন সে নিজের ভুল বুঝতে পেরে যাকাত আদায় করতে চায়, তাহলে শুধু তাওবা করার দ্বারা তার অতিতের অনাদায়কৃত যাকাতগুলো ক্ষমা হয়ে যাবে না। প্রথমে অতিতের অনাদায়কৃত যাকাতগুলো আদায় করতে হবে। তাহলেই বুঝা যাবে যে, সে আন্তরিকভাবে তাওবা করেছে এবং তাওবার প্রতি সত্যিই শ্রদ্ধাশীল।
অতি তাড়াতাড়ি গুণাহের কাজ থেকে দূরে সরে যাওয়া। কেননা নিষিদ্ধ কাজ দ্বারা যদি অপরাধ হয়ে যায় তাহলে সে উহার মধ্যে ধাবিত হবে। আর তার অপরাধ যদি কোন আবশ্যকীয় কাজ বর্জনের মাধ্যমে হয় তাহলে তা অবশ্যই সাথে সাথে করে নিবে। যতটুকু সম্ভব সাথে সাথে পূরণ করে নিবে। যেমন যাকাত ও হ্জ্জ।
যদি পিতা-মাতার অবাধ্য হয়ে থাকে, তাহলে শুধু তাওবা করার দ্বারাই তা কবুল হবে না। সাথে সাথে তাদের প্রতি যত্নবান হয়ে তাদের সেবায় নিজেকে মগ্ন করে তাওবার সত্যতা প্রমাণ করতে হবে।
কেউ যদি আত্নিয়তার বন্ধন ছিন্ন করে থাকে, তাহলে শুধু তাওবা করার দ্বারাই তার তাওবা কবুল হবে না। বরং আত্নিয়দের সাথে ছিন্ন বন্ধন থেকে বেরিয়ে এসে তাদের সাথে সু-সম্পর্ক গড়ে তুলে তাওবার সত্যতা প্রমান করতে হবে। তাহলেই কেবল তার এ তাওবা কবুল হবে।
কেউ যদি হারাম কাজের সাথে জড়িয়ে পড়ে, তাহলে তাওবার সাথে সাথে তা থেকে ফিরে আসতে হবে। যেমন, কোন ব্যক্তি সুধের ব্যবসায় নিজেকে জড়িয়েছে। এখন তা থেকে তাওবা করতে হলে শুধু মুখে তাওবা করলাম বললেই যথেষ্ট হবে না। বরং সাথে সাথে তা থেকে ফিরে এসে, তা থেকে উপার্জিত অর্থ ফেরৎ বা ছওয়াবের নিয়ত ছাড়াই গরীব মিসকিনদের মাঝে বিলি-বন্টন করে দিয়ে তাওবার প্রতি যে শ্রদ্ধাশীল তা প্রমান করতে হবে। তাহলেই কেবল তার এতাওবা কবুল হবে।
কেউ যদি কারো আমানতের খেয়ানত করে থাকে, তাহলে শুধু তাওবা করলেই যথেষ্ট হবেনা। সাথে সাথে তার আমানত ফিরিয়ে দিতে হবে। কেউ যদি কারো গীবত করে থাকে তাহলে তার কাছ থেকে ক্ষমা নিয়ে নিতে হবে। যার গীবত করা হয়েছে তার সাথে দেখা সাক্ষাৎ হওয়ার সম্ভাবনা না থাকলে যে সভায় বা মজলিসে বা যাদের সামনে তার গীবত করা হয়েছে সে মজলিসে বা তাদের সামনে তার কোন গুণ নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে। ওলামাগণ বলেন যে, এর দ্বারাও গীবত থেকে তাওবার সত্যতা প্রমাণিত হবে।
আর কোন ব্যক্তি বারবর কোন অপরাধ করার দ্বারা তওবা করায় কোন লাভ নেই। ধরা যাক, কেউ সুদ খাওয়া থেকে তওবার করল অথচ সে সুদের কাজে কর্মে সর্বদা ব্যস্ত থাকে তাহলে তার এই ধরণের তওবা করার দ্বারা কোন লাভ হবে না। বরং তার তওবা হবে হাসি-ঠাট্টা ও বিদ্রুপ করার ন্যায়। বরং এর দ্বারা সে আল্লাহর তার আয়াতসমূহের সাথে অবজ্ঞা আচরণ করল। এর দ্বারা তাকে আল্লাহর রহমত থেকে দূরে সরিয়ে দিবে। আবার যদি কেউ তওবা করে যে, জামাতের সাথে নামাজ পড়া আর কখনো ত্যাগ করবে না, অথচ সর্বদা সে জামাতে নামায ত্যাগ করে চলে, তাহলে তার এই তওবা করার দ্বারা কোন লাভ হবে না।
আর যখন সৃষ্টজীবের অধিকারের সাথে সংশ্লিষ্ট কোন ব্যাপারে অপরাধ করে বসে তখন সৃষ্টজীবের অধিকার আদায় না করা পর্যন্ত তার তওবা সঠিক হবে না। আর যখন কোন ব্যক্তি অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে হস্তগত করে অথবা কারো সম্পদ নিয়ে আবার অস্বীকার করে তাহলে উক্ত ব্যক্তির সম্পদ ফিরিয়ে না দেয়া পর্যন্ত তওবা সঠিক হবে না। আর যদি ইতিমধ্যে উক্ত সম্পদের মালিক আরো পায় তাহলে তার উত্তরাধিকারীদের কাছে ফিরিয়ে দিবে। আর যদি তার কোন উত্তরাধিকারী জীবিত না থাকে তাহলে বাইতুল মালে আদায় করে দিবে। আর যদি এমন হয় যে, কোন ব্যক্তি এই হস্তগত সম্পদের মালিক না পায় তাহলে উক্ত সম্পদশীল ব্যক্তির নামে সাদকাহ করে দিব।
আর যদি কোন মুসলিমকে গীবত করার দ্বারা অপরাধ ঘটে যায় তাহলে উক্ত গীবত থেকে মুক্ত থাকা আবশ্যক হয়ে যায়। আর কোন অপরাধ বারবার করার পরও তওবা করা সঠিক হবে। কেননা আমল কোন কোন সময় কম হয়ে থাকে। আর ঈমান (তওবা) বৃদ্ধি পেয়ে থাকে।
চতুর্থ শর্ত : ভবিষ্যতে আর এপাপকর্মে লিপ্ত হবেনা বলে দৃঢ় সংকল্প করতে হবে। এটা হল তাওবার শর্তগুলোর মাঝে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি শর্ত। সুতরাং কেউ যদি তাওবা করার সময় এ নিয়ত করে যে, এখন এ পাপ থেকে বিরত থেকে তাওবা করলাম। তবে সুযোগ পেলে আবারো করব। তাহলে তার তাওবা কবুল হবেনা। কোন ব্যক্তির অঢেল টাকা-পয়সা আছে, মদ-জুওয়ার রমরমা ব্যবসা করে। কোন একসময় তার অর্থ সংকট হয়ে পড়ে। এখন যদি সে তাওবা করে যে, আমি আর এগুলোর ব্যবসা করব না, কিন্তু মনে মনে থাকে যে, আবারো টাকা-পয়সা হাতে এলে নতুনভাবে এ ব্যবসা শুরু করব। তাহলে তার এ তাওবা কবুল হবেনা। টাকা-পয়সা না থাকার কারণে এখন সে ইচ্ছা করলেও উক্ত হারাম ব্যবসা করতে পারছে না, তাই এ জাতীয় তাওবাকে বলা হয় তাওবায়ে “আযেজ” অর্থাৎ অক্ষম তাওবা। আর এ তাওবা তাওবাকারীর কোন কাজে আসে না। তাই পাপ করার সামর্থ থাকাকালীন সময়টা হল তাওবার উপযুক্ত সময়। পাপ করার ক্ষমতা লোপ পেয়ে গেলে তখন তাওবা করা যথোপযুক্ত নয়।
এ ধরণের সুদৃঢ় সিদ্ধান্ত নেয় যে, এই ধরণের অপরাধ ভবিষ্যতে আর কখনো করবে না। কেননা ইহা তওবার ফল এবং তওবাকারীর জন্য একটা সত্যতার দলিল। যদি কেউ বলে যে, নিশ্চয় সে তওবা করছে এবং সুদৃঢ় সিদ্ধান্ত নিয়েছে আর কখনো করবে না অথবা তওবা করেছে এই নিয়তে যে, সে বারবার এই কাজ করবে আবার তওবা করবে তাহলে তার তওবা কবূলযোগ্য হবে না। কেননা তাহলে তার এই তওবা হবে সাময়িক যা দ্বারা তার কোন প্রকার দ্বীন ও দুনিয়ার উপকার আসবে না।
পঞ্চম শর্ত : এমন সময়ে তাওবা করতে হবে, যেসময়ে তাওবা কবুল হওয়ার ব্যপারে ঘোষনা রয়েছে। [মুসলিম-৪৮৭২, রিয়া: ১৭] আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন :
مَنْ تاب قَبْلَ أَنْ تطلُعَ الشَّمْسُ مِنْ مغْرِبِهَا تَابَ الله علَيْه
যে ব্যক্তি পশ্চিম দিক থেকে সুর্য উদয়ের পূর্ব পর্যন্ত তাওবা করবে আল্লাহ তাআলা তার তাওবা কবুল করে নিবেন। তেমনি ভাবে [মুসনাদু আহমদ-৫৮৮৫, রিয়া: ১৮]
আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন:
إِنَّ الله عزَّ وجَلَّ يقْبَلُ توْبة العبْدِ مَالَم يُغرْغرِ
অবশ্যই আল্লাহ তাআলা তার বান্দার তাওবা কবুল করেন তার মৃত্যুর লক্ষণ প্রকাশ না পাওয়া পর্যন্ত। তাই মৃত্যুর আলামত প্রকাশ পাওয়ার পর তাওবা করার আর সুযোগ থাকেনা। মানুষ যখন তার জীবনের শেষ মুহুর্তে অবস্থান করে, বেঁচে থাকার আর কোন সম্ভাবনা দেখেনা তখন কেবল তাওবা করে এজাতীয় তাওবাকে বলা হয় (তাওবায়ে “এযতেরার”) আর তাওবায়ে “এযতেরার” তাওবাকারীর কোন কাজে আসেনা। আল্লাহ তাআলা সুরায়ে নিসার ১৮ নাম্বার আয়াতে বলেন :
وَلَيْسَتِ التَّوْبَةُ لِلَّذِينَ يَعْمَلُونَ السَّيِّئَاتِ حَتَّىٰ إِذَا حَضَرَ أَحَدَهُمُ الْمَوْتُ قَالَ إِنِّي تُبْتُ الْآنَ وَلَا الَّذِينَ يَمُوتُونَ وَهُمْ كُفَّارٌ ۚ أُولَٰئِكَ أَعْتَدْنَا لَهُمْ عَذَابًا أَلِيمًا
আর এমন লোকদের জন্য কোন ক্ষমা নেই, যারা মন্দ কাজ করতেই থাকে। এমনকি যখন তাদের কারো মাথার উপর মৃত্যু উপস্থিত হয়, তখন বলতে থাকে: আমি এখন তাওবা করছি। আর তাওবা নেই তাদের জন্য যারা কুফরী অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে। আমি তাদের জন্য যন্ত্রনাদায়ক শাস্তির ব্যবস্থা রেখেছি। তাই সুস্থ জীবনই তাওবার উপযুক্ত সময়। জীবন থেকে নিরাশ হওয়ার পর তাওবার উপযুক্ত সময় আর থাকে না। আল্লাহ তাআলা সুরাতুল মু’মিনের ৮৩ এবং ৮৪ নাম্বার আয়াতে বলেন :
فَلَمَّا رَأَوْا بَأْسَنَا قَالُوا آمَنَّا بِاللهِ وَحْدَهُ وَكَفَرْنَا بِمَا كُنَّا بِهِ مُشْرِكِينَ [৮৪] فَلَمْ يَكُ يَنْفَعُهُمْ إِيمَانُهُمْ لَمَّا رَأَوْا بَأْسَنَا
তারা যখন আমার শাস্তি প্রত্যক্ষ করল,তখন বলল: আমরা এক আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করলাম। এবং যাদেরকে শরীক করতাম তাদেরকে পরিহার করলাম। অতঃপর তাদের ঈমান তাদের কোন কাজেই আসলনা, যখন তারা শাস্তি প্রত্যক্ষ করল।
তওবার কবুলের সময় শেষ হবার পর আর কখনো গুনাহর কাজ করবে না। কেননা যদি তওবা কবূলের সময় শেষ হবার পর আবারও উক্ত গুনাহ করে তবে তার তওবা কবূল হবে না। আর তওবা কবূলের সময় হওয়া দু‘-ধরণের। একটি হলো ব্যাপকভাবে প্রত্যেকের জন্য। আর দ্বিতীয়টি হল প্রত্যেকটি ব্যক্তির নিজস্বতার জন্য। সাধারণভাবে : আর উহা হল পশ্চিম দিক থেকে সূর্য উদয় হওয়া। আর পশ্চিম দিকে সূর্য যখন উদিত হবে তখন আর তওবার করার দ্বারা কোন উপকার হবে না। এ ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা বলেন যে,
]يَوْمَ يَأْتِيَ بَعْضُ آيَاتِ رَبِّكَ يَوْمَ يَأْتِي بَعْضُ آيَاتِ رَبِّكَ لا يَنْفَعُ نَفْساً إِيمَانُهَا لَمْ تَكُنْ آمَنَتْ مِنْ قَبْلُ أَوْ
كَسَبَتْ فِي إِيمَانِهَا خَيْراً[ (الأنعام: من الآية158)
অর্থাৎ, তখন আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেকটি অন্তকরণে মোহর মেরে দিবেন এবং মানুষের আমল করার সুযোগ শেষ হয়ে যাবে। নবী করীম (সা.) আরো বলেন যে, যে ব্যক্তি সূ্র্য্ পশ্চিম দিক উদয় হবার পূর্ব সময় পর্যন্ত তওবা করবে তার তওবা আল্লাহ কবুল করবেন।(মুসলিম)
বিশেষভাবে : প্রত্যেকটি ব্যক্তির মৃত্যুর সময় উপস্থিত হলে। কেননা মৃত্যুর সময় হাযির হয়ে গেলে তার আর তওবা কবুলের সময় থাকে না। ফলে তওবা করলেও কোন লাভ হবে না। কেননা আল্লাহ তা‘আলা বলেন যে,
]وَلَيْسَتِ التَّوْبَةُ لِلَّذِينَ يَعْمَلُونَ السَّيِّئَاتِ حَتَّى إِذَا حَضَرَ أَحَدَهُمُ الْمَوْتُ قَالَ إِنِّي تُبْتُ الْآن [ (النساء: من الآية18)
অর্থাৎ আর তাদের তওবা কোন কাজে আসবে না যারা খারাপ আমল করে যতক্ষণ না তাদের নিকট মৃত্যু উপস্থিত হয়। আর মৃত্যুকালীন সময়ে বলে যে, আমি এখন তওবা করলাম।
আব্দুল্লাহ ইবন ওমর (রা.) হতে বর্ণিত তিনি বলেন যে, রাসূল (সা.) বলেছেন, নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা বান্দাহর তওবা কবুল করে থাকেন যতক্ষণ না তার রুহ অবশিষ্ট থাকে। (তিরমিযী)
আর যখনই সব শর্তানযায়ী তওবা করা হয় তখন তওবা কবূল করা হয় এবং আল্লাহ তা‘আলা এর দ্বারা বড় ধরণের অপরাধও ক্ষমা করে দিবেন। এ ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
]قُلْ يَا عِبَادِيَ الَّذِينَ أَسْرَفُوا عَلَى أَنْفُسِهِمْ لا تَقْنَطُوا مِنْ رَحْمَةِ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ جَمِيعاً إِنَّهُ هُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ[
(الزمر:53)
অর্থাৎ যহ রাসূল আপনি বলে দিন যে, হে আমার বান্দাহরা যারা নিজেদের আত্মার উপর অত্যাচার করেছ, তোমরা কখনোই আল্লাহর রহমত হতাশ হয়ে যেওনা। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা সব গুনাহকে ক্ষমা করে দিবেন। কেননা তিনি অতিশয় ক্ষমাশীল ও দয়ালু।
এই আয়াতটি আল্লাহর দিকে সাড়াদানকারী ও তওবাকারী ব্যক্তিদেরকে মুসলিম বলে প্রমাণ করে। যেমন মহান আল্লাহ বলেন -
]وَمَنْ يَعْمَلْ سُوءاً أَوْ يَظْلِمْ نَفْسَهُ ثُمَّ يَسْتَغْفِرِ اللَّهَ يَجِدِ اللَّهَ غَفُوراً رَحِيماً[
(النساء:110)
অর্থাৎ যে ব্যক্তি কোন খারাপ আমল করে অথবা নিজের প্রতি অত্যাচার করে এরপর ক্ষমা প্রার্থনা করে না। এর পরেও সে আল্লাহকে অতিশয় ক্ষমাশীল ও দয়ালু হিসেবে পাবে।
আল্লাহর নিকট প্রার্থনা হলো, আল্লাহ যেন আমাদের ক্ষমা করেন এবং আমাদেরকে তাওবা করার তাওফীক দান করেন। আর আমাদের মধ্যে যারা আল্লাহর দরবারে তাওবা করেন তাদের তওবা যেন তিনি কবুল করেন।

তাওবার ফলাফল:

ইমাম গাজালী রহ. তার কিতাব মিনহাজুল আবেদীনে’ লিখেন “অতপর হে! ইবাদতকারী তোমার উপর কর্তব্য হল তুমি আল্লাহর নিকট তাওবা কর । আর তাওবা করবে তুমি দুইটি কারণে,

এক :

তাওবার কারণে আল্লাহ তোমাকে তার আনুগত্য করা সহজ করে দিবেন এবং তোমার নেক কাজ করার তাওফীক ও সৌভাগ্য লাভ হবে। গুনাহের পরিণতি হল, গুনাহ মানুষকে বঞ্চিত করার অভিবাকত্ব করে এবং লাঞ্ছনা ও বঞ্চনার দিকে ঠেলে দেয়। গুনাহতে আবদ্ধ লোককে আল্লাহর আনুগত্যের পথে চলা ও আল্লাহর দীনের খেদমতে অগ্রসর হতে গুনাহ বারণ করে। গুনাহের বোঝা ভারি হলে সকল প্রকার নেক আমল তার জন্য কঠিন হয়ে পড়ে। তার জন্য আর কোন নেক আমল করা সহজ হয় না ইবাদত বন্দেগীতে সে আর কোন উৎসাহ পায় না। আর সব চেয়ে বিপদজনক কথা হল, যারা সব সময় গুনাহে লিপ্ত থাকে তাদের অন্তর কালো হয়ে যায়, ফলে তারা অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়। অন্তর ভাল মন্দের বিচার করতে অক্ষম হয়ে যায়, তাদের অন্তর পাথরের চেয়েও শক্ত হয়ে যায়। ফলে কোন ভাল কাজ তার অন্তর কবুল করে না।
তখন একমাত্র আল্লাহর অনুগ্রহ ছাড়া সে আর কোন মুক্তি বা নাজাতের পথ খুজে পায় না। কোন কিছুতেই তৃপ্তি অনুভব করে না। সে নিজেকে অনিরাপদ মতে করে। নিজের জন্য কোথাও নিরাপদ স্থান খুঁজে পায় না এবং পায় না কোন আশ্রয় কেন্দ্র। পরিণতিতে ধাবিত হয় গভীর অন্ধকার ও ভয়ঙ্কর বিপদের দিকে। ধীরে ধীরে গুনাহ তাকে ঈমান হারা হওয়া এবং শিরক ও কুফরের দিকে টেনে নিয়ে যায়।
আরো আশ্চযের্র বিষয় হল, যে ব্যক্তি র্দুভাগা এবং যার অন্তর পাথরের চেয়েও বেশী কঠিন, তাকে কিভাবে আল্লাহর আনুগত্যের তাওফীক দেয়া হবে ? তাকে কিভাবে আহবান করা হবে কল্যাণের পথে ? অথচ সে গুনাহের কাজেই অবিচল, তার মধ্যে কোন অনুভূতি নাই। সে যে একজন অপরাধী ও অন্যায়কারী এ বিষয়ে তার মধ্যে কোন চেতনা জাগ্রত হয় না। সুতরাং তাকে কিভাবে কাছে আনা হবে যে নাপাকী ও র্দূগন্ধময় বস্তুর সাথে সর্বদা মাখামাখি করছে, গুনাহের কাজে লিপ্ত থাকে অহর্নিশ।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন : মানুষ যখন মিথ্যা কথা বলে,তার মুখ থেকে র্দূগন্ধ বের হতে থাকে, আর সাথে সাথে তার কাছ থেকে দুই জন ফেরেশতা দূরে সরে যায়। তখন আর তার মুখ ও জিহবা আল্লাহর যিকিরের উপযোগী থাকে না
ফলে গুনাহে লিপ্ত থাকে এ ধরনের খুব কম লোকই আছে যারা পরর্বতীতে আল্লাহর আনুগত্যে ফিরে আসে এবং আল্লাহর ইবাদতে কোন স্বাদ আস্বাদন করে। যদি সে কোন দান-সদকা করে তা অনেক কষ্টে, এতে কোন স্বাদ উপভোগ করে না, আত্মার কোন তৃপ্তি হয় না এগুলো সবই হল গুনাহের পরিণতি এবং তাওবা না করার ফলাফল।
জৈনক লোক সত্য কথাই বলছেন, যদি তুমি দিনে রোজা এবং রাতে ইবাদত করতে না পার, তাহলে মনে রাখবে তুমি একজন হাতে পায়ে কড়া পরিহিত শিকলাবদ্ধ লোক। তোমার গুনাহই তোমাকে এ পরিণতিতে টেনে এনেছে।

দুই :

আর দ্বিতীয় বিষয় হল, তোমাকে যে কারণে আল্লাহর নিকট তাওবা করতে হবে তা হল, যাতে আল্লাহ তোমার ইবাদত বন্দেগীগুলো কবুল করেন। কারণ, পাওনাদার সাধারণত উপঢৌকন গ্রহণ করে না। গুনাহ হতে বিরত থাকা, গুনাহ হতে তাওবা করা এবং প্রতিপালককে সন্তুষ্ট করা হল ফরজ কাজ। আর অন্যান্য সকল ইবাদত তা সবই নফল। সুতরাং, মূল পাওনা পরিশোধ ছাড়া আল্লাহ তাআলা তোমার থেকে কিভাবে উপঢৌকন গ্রহণ করবেন? তুমি কীভাবে তার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে বৈধ ও মুবাহ কাজা গুলি ছেড়ে দিবে অথচ তুমি এখনো আল্লাহর নাফরমানী এবং নিষিদ্ধ কাজে লিপ্ত। তুমি কিভাবে আল্লাহকে ডাকবে, তার সাথে মুনাজাত করবে এবং তার প্রশংসা করবে অথচ আল্লাহ তোমার উপর রাগান্বিত। মনে রাখতে হবে যারা আল্লাহর নাফরমানীতে লিপ্ত তাদের অবস্থা উল্লেখিত অবস্থার মোটেই ব্যতিক্রম নয়, তারা আল্লাহর অবাদ্ধতায় লিপ্ত অথচ তারা আল্লাহর নিকট দোয়া করে, আল্লাহর দরবারে মুনাজাত করে এবং তার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করে।
[Continue reading...]

উসিলা তালাশ

- 0 comments
 উসিলা তালাশ

১। কুরআন শরীফ-এ আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক উনার রহমত মুহসিন বা আল্লাহওয়ালাগণ উনাদের নিকটে।” (সূরা আ’রাফ : আয়াত শরীফ ৫৬)

২। পবিত্র কুরআন শরীফ এর ‘সূরা কাহাফ’-এর ১৭ নম্বর আয়াত শরীফ উল্লেখ রয়েছে, কামিল মুর্শিদের গুরুত্ব সম্পর্কে কালামুল্লাহ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, “আল্লাহ পাক যাঁকে হিদায়েত দান করেন, সেই হিদায়েত পায়। আর যে ব্যক্তি গুমরাহীর মধ্যে দৃঢ় থাকে, সে কোন ওলীয়ে মুর্শিদ (কামিল শায়খ বা পীর) উনার ছোহবত লাভ করতে পারে না।


৩। আল্লাহ পাক বলেন, “তোমরা সব আল্লাহওয়ালা হয়ে যাও”। (সূরা ইমরান-৭৯)

৪। মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কালাম পাক-এর সূরা তওবার ১১৯ নম্বর আয়াত শরীফ-এ ইরশাদ করেন, “হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহ পাককে ভয় করো এবং ছাদিক্বীন বা সত্যবাদীগণের সঙ্গী হও। এখানে ছাদিক্বীন বলতে ওলী-আল্লাহ গণকেই বুঝান হয়েছে।

৫। আল্লাহ পাক কুরআন শরীফে বলেন, “আল্লাহ পাক এর ও উনার রাসুলের ইত্বায়াত কর এবং তোমাদের মধ্যে যারা (উলিল আমর) আদেশদাতা, তাদের অনুসরণ কর”।

৬। আল্লাহ পাক বলেন, “হে ঈমানদারগণ! তোমরা আমাকে পাওয়ার জন্য উসিলা তালাশ কর”।

৭। পবিত্র কুরআন শরীফ এর ‘সূরা কাহাফ’-এর ২৮ নম্বর আয়াত শরীফ উল্লেখ রয়েছে, আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, “আপনি নিজেকে উনাদের সংসর্গে আবদ্ধ রাখুন, যাঁরা সকাল-সন্ধ্যায় উনাদের রবকে ডাকে উনার সন্তুষ্টি হাছিলের জন্য। অর্থাৎ যে ব্যক্তি আল্লাহ্ পাক, উনার সন্তুষ্টি হাছিলের জন্য ক্বল্বী যিকির করেন, উনার অনুসরণ ও ছোহ্বত (সাক্ষাত) এখতিয়ার করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

৮। হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আদম সন্তানের শরীরে এক টুকরা গোস্ত আছে যদি সেটা শুদ্ধ হয়ে যায় তবে সমস্ত শরীর শুদ্ধ হয়ে যায়। আর যদি সেটা অশুদ্ধ হয় তাহলে সমস্ত শরীর বরবাদ হয়ে যায়, সাবধান ওটা হচ্ছে কলব”। (বুখারী শরীফ)

৯। মহান আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, “যার ক্বলবে আমার যিকির জারি নেই সে নফসের অনুসরণ করে এবং তার আমলগুলো হয় শরীয়তের খিলাফ”।

১০। আল্লাহ পাক কুরআন শরীফে বলেন, “সাবধান! আল্লাহ পাকের যিকির দ্বারা দিল ইতমিনান হয়”। এই আয়াতের ব্যাখ্যায় রসুলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “শয়তান আদম সন্তানের কলবের উপর বসে, যখন আল্লাহ পাকের যিকির করে তখন পালিয়ে যায়, আর যখন আল্লাহ পাকের যিকির থেকে গাফিল হয় তখন শয়তান ওসওয়াসা দেয়”।

১১। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ করেন, “প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য (জরুরত আন্দাজ) ইল্ম অর্জন করা ফরয। (বায়হাক্বী, মিশকাত, মিরকাত, লুময়াত, তা’লীকুছ্ ছবীহ্, শরহুত্ ত্বীবী, মোযাহেরে হক্ব, আশয়াতুল লুময়াত)

১২। হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “ইল্ম দু’প্রকার- (১) ক্বল্বী ইল্ম অর্থাৎ ইল্মে তাছাউফ। আর এটাই মূলতঃ উপকারী ইল্ম। (২) যবানী ইল্ম অর্থাৎ ইল্মে ফিক্বাহ্, যা আল্লাহ্ পাক, উনার পক্ষ হতে বান্দার জন্য দলীল। (দারিমী, তারগীব ওয়াত তারহীব, তারীখ, আব্দুল বার, দাইলামী, বায়হাক্বী, মিশকাত, মিরকাত, শরহুত্ ত্বীবী, তা’লীকুছ্ ছবীহ্, আশয়াতুল লুময়াত, লুময়াত, মুযাহিরে হক্ব)

সকলেই একমত যে, ইল্মে তাছাউফ অর্জন করার মাধ্যমে অন্তর পরিশুদ্ধ করতঃ হুযূরী ক্বল্ব হাছিল করা তথা অন্ততঃপক্ষে বিলায়েতে আম হাছিল করা ফরয। এ ফরয ততক্ষণ পর্যন্ত আদায় করা সম্ভব হবেনা, যতক্ষণ পর্যন্ত একজন কামিল মুর্শিদ, উনার নিকট বাইয়াত না হবে। তাই বাইয়াত গ্রহণ করাও ফরয।

১৩। এ প্রসঙ্গে বিখ্যাত তাফসীর গ্রন্থ “তাফসীরে মাযহারীতে উল্লেখ আছে যে, “যে কাজ বা আমল ব্যতীত ফরযসমূহ আদায় করা সম্ভব হয়না, উক্ত ফরযগুলোকে আদায় করার জন্য সে কাজ বা আমল করাও ফরয”।

১৪। হানাফী মায্হাবের মশহুর ফিক্বাহর কিতাব “দুররুল মুখ্তারে উল্লেখ আছে, “যে আমল ব্যতীত কোন ফরয পূর্ণ হয়না; উক্ত ফরয পূর্ণ করার জন্য ঐ আমল করাটাও ফরয”।

উল্লিখিত উছুলের ভিত্তিতে সুস্পষ্টভাবে এটিই প্রমাণিত হয় যে, ফরয পরিমাণ ইল্মে তাছাউফ যেহেতু অর্জন করা ফরয, আর তা যেহেতু কামিল মুর্শিদ বা পীর ছাহেব, উনার নিকট বাইয়াত হওয়া ব্যতীত অর্জন করা সম্ভব নয়, সেহেতু একজন কামিল মুর্শিদ অর্থাৎ যিনি সর্বদা আল্লাহ্ পাক, উনার যিকিরে মশগুল, উনার নিকট বাইয়াত গ্রহণ করাও ফরয।

১৫। সুলতানুল আরিফীন, হযরত বায়েজীদ বোস্তামী রহমতুল্লাহি আলাইহি, সাইয়্যিদুত্ ত্বায়িফা হযরত জুনায়েদ বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হুজ্জাতুল ইসলাম, হযরত ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহিসহ আরো অনেকেই বলেন যে, “যার কোন পীর বা মুর্শিদ নেই তার মুর্শিদ বা পথ প্রদর্শক হলো শয়তান”। (ক্বওলুল জামীল, নুরুন আলা নূর, তাছাউফ তত্ত্ব)

১৬। হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “তোমরা কার নিকট থেকে দ্বীন শিক্ষা করছ, তাকে দেখে নাও”। (মুসলিম শরীফ)। তাই, ইসলাম কখনও বলে না যে তোমরা কোন ওলী-আল্লাহর কাছে যেও না, বরং উনাদের কাছে যাওয়ার জন্যই নির্দেশ করা হয়েছে।

১৭। আল্লাহ পাক বলেন, “যদি তোমরা না জান, তবে আহলে যিকির বা আল্লাহওয়ালাগণকে জিজ্ঞেস করে জেনে নাও”। (সূরা নহল ৪৩ ও সূরা আম্বিয়া-৭)

[Continue reading...]

যিকিরুল্লাহ

- 0 comments
 যিকিরুল্লাহ

 وَمَن يُؤْمِن بِاللَّهِ يَهْدِ قَلْبَهُ
যে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস করে, তিনি তার অন্তরকে সৎপথ প্রদর্শন করেন। (সুরা-আত তাগাবুন-১১)
  أُوْلَئِكَ كَتَبَ فِي قُلُوبِهِمُ الْإِيمَانَ
তাদের ক্বলবে(অন্তর বা মন) আল্লাহ ঈমানকে নির্ধারিত দিয়েছেন।(সুরা মুজাদালাহ-২২)
  وَلَكِنَّ اللَّهَ حَبَّبَ إِلَيْكُمُ الْإِيمَانَ وَزَيَّنَهُ فِي قُلُوبِكُمْ।
কিন্তু আল্লাহ তোমাদের ক্ললবে(অন্তর বা মন) ঈমানের মহব্বত সৃষ্টি করে দিয়েছেন এবং তা হৃদয়গ্রাহী করে দিয়েছেন।
(সুরা-হুজুরাত-৭)
قَالَتِ الْأَعْرَابُ آمَنَّا قُل لَّمْ تُؤْمِنُوا وَلَكِن قُولُوا أَسْلَمْنَا وَلَمَّا يَدْخُلِ الْإِيمَانُ فِي قُلُوبِكُمْ
মরুবাসীরা বলেঃ আমরা বিশ্বাস স্থাপন করেছি। বলুনঃ তোমরা বিশ্বাস স্থাপন করনি; বরং বল, আমরা বশ্যতা স্বীকার করেছি। এখনও তোমাদের ক্ললবে(অন্তর বা মন) বিশ্বাস জন্মেনি। (সুরা হুজুরাত-১৪)
يَا أَيُّهَا الرَّسُولُ لاَ يَحْزُنكَ الَّذِينَ يُسَارِعُونَ فِي الْكُفْرِ مِنَ الَّذِينَ قَالُواْ آمَنَّا بِأَفْوَاهِهِمْ وَلَمْ تُؤْمِن قُلُوبُهُمْ
হে রসূল, তাদের জন্যে দুঃখ করবেন না, যারা দৌড়ে গিয়ে কুফরে পতিত হয়; যারা মুখে বলেঃ আমরা মুসলমান, অথচ তাদের ক্ললব(অন্তর বা মন) মুসলমান নয়।(সুরা-মায়েদাহ ৪১)
مَن كَفَرَ بِاللّهِ مِن بَعْدِ إيمَانِهِ إِلاَّ مَنْ أُكْرِهَ وَقَلْبُهُ مُطْمَئِنٌّ بِالإِيمَانِ وَلَـكِن مَّن شَرَحَ بِالْكُفْرِ صَدْرًا فَعَلَيْهِمْ غَضَبٌ مِّنَ اللّهِ وَلَهُمْ عَذَابٌ عَظِيمٌ
যার উপর জবরদস্তি করা হয় এবং তার ক্ললব(অন্তর বা মন) বিশ্বাসে অটল থাকে সে ব্যতীত যে কেউ বিশ্বাসী হওয়ার পর আল্লাহতে অবিশ্বাসী হয় এবং কুফরীর জন্য মন উম্মুক্ত করে দেয় তাদের উপর আপতিত হবে আল্লাহর গযব এবং তাদের জন্যে রয়েছে শাস্তি।-সুরা নহল-১০৬
. إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ الَّذِينَ إِذَا ذُكِرَ اللّهُ وَجِلَتْ قُلُوبُهُمْ
যারা ঈমানদার, তারা এমন যে, যখন আল্লাহর নাম নেয়া হয় তখন ভীত হয়ে পড়ে তাদের ক্ললব(অন্তর বা মন)(সুরা-আনফাল-২)
الَّذِينَ إِذَا ذُكِرَ اللَّهُ وَجِلَتْ قُلُوبُهُمْ
যাদের ক্ললব(অন্তর বা মন) আল্লাহর নাম স্মরণ করা হলে ভীত হয়। (সুরা হাজ্জ ৩৫)
  إِنَّ الَّذِينَ يَغُضُّونَ أَصْوَاتَهُمْ عِندَ رَسُولِ اللَّهِ أُوْلَئِكَ الَّذِينَ امْتَحَنَ اللَّهُ قُلُوبَهُمْ لِلتَّقْوَى لَهُم مَّغْفِرَةٌ وَأَجْرٌ عَظِيمٌ
যারা আল্লাহর রসূলের সামনে নিজেদের কন্ঠস্বর নীচু করে, আল্লাহ তাদের ক্ললবকে(অন্তর বা মন) শিষ্টাচারের জন্যে শোধিত করেছেন। তাদের জন্যে রয়েছে ক্ষমা ও মহাপুরস্কার। (সুরা হুজরাত-৩)

فَمَن يُرِدِ اللّهُ أَن يَهْدِيَهُ يَشْرَحْ صَدْرَهُ لِلإِسْلاَمِ وَمَن يُرِدْ أَن يُضِلَّهُ يَجْعَلْ صَدْرَهُ ضَيِّقًا حَرَجًا كَأَنَّمَا يَصَّعَّدُ فِي السَّمَاء كَذَلِكَ يَجْعَلُ اللّهُ الرِّجْسَ عَلَى الَّذِينَ لاَ يُؤْمِنُونَ
অতঃপর আল্লাহ যাকে পথ-প্রদর্শন করতে চান, তার বক্ষকে ইসলামের জন্যে উম্মুক্ত করে দেন এবং যাকে বিপথগামী করতে চান, তার বক্ষকে সংকীর্ণ অত্যধিক সংকীর্ণ করে দেন,তাহার কাছে ইসলাম অনুসরণ আকাশে আরোহনের মতই দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে।যাহারা বিশ্বাস করে না আল্লাহ তাহাদিগকে এইরুপে লাঞ্ছিত করেন (আনআম-১২৫)।
পবিত্র হাদিস শরীফে উল্লেখ আছে “জেনে রেখ, মানুষের দেহের মধ্যে এক খন্ড মাংশ পিন্ড আছে, যখন তাহা সংশোধিত হয়, তখন সমগ্র দেহ সংশোধিত হয়ে যায়। আর যখন তা দুষিত হয় তখন সমগ্র দেহটাইত দুষিত হয়ে যায়। মনে রেখ ওটাই ক্বলব”( বোখারী ও মুসলিম শরীফ)। অন্য এক হাদিসে পাওয়া যায় মানুষ যখন কোন পাপ কাজ করে তখন তার ক্বলবের মধ্যে কালি পড়ে যায়। আমরা রাসুল পাক (সাঃ) এর জীবন পর্যালোচনা করলে দেখতে পাই বাল্য কালে উনার দুবার বুক খুলে সীনা পরিস্কার করা হয়েছে। অন্য হাদিসে পাওয়া যায় শয়তান প্রতিটি মানুষের ক্বলবের মধ্যে হাটু গেড়ে বসে থাকে। যখন সে জিকির শুরু করে তখন সে পালিয়ে যায়। আবার যখন আল্লাহর জিকির থেকে গাফেল হয় তখন শয়তান আবার ক্বলবে ফিরে এসে ওয়াসওয়াসা (কুমন্ত্রনা) দিতে থাকে।

মরুভূমিতে এক মেষপালকের নিকট এসে এক নিঃসঙ্গ-পথিক আবেদন করলেন, আমি ক্ষুধার্ত, খাবার বলতে আমার কাছে কিছু নেই; আমি-কি তোমার একটি মেষ থেকে কিছু দুগ্ধ দোহন করে নিতে পারি? মেষপালক বললো, আমি-তো এই মেষের মালিক নই; সুতরাং মালিকের অনুমতি ছাড়া কাউকে দুধ দোহন করতে দিতে পারি না। মালিক নিশ্চয়ই জানতে পারবে এবং সে এটা পছন্দ করবে না। আসলে পথিকের মনে ছিল অন্য খেয়াল। তিনি বললেন, তুমি বরং আমার কাছে একটি মেষ বিক্রয় করে দাও। মালিক যখন জানতে চাইবে, তুমি বলবে যে, একটি নেকড়ে বাঘ এসে মেষটিকে ধরে নিয়ে গেছে। নেকড়েরা-তো পশুপালগুলোতে প্রায়-সময়ই হানা দেয়। আমিও আমার ক্ষুধা নিবারণ করতে পারবো, আর তুমিও টাকা পাবে, আমাদের দুজনেরই লাভ হবে। মেষপালক অত্যন্ত জোরালোভাবে এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বলল, কিন্তু আল্লাহর ব্যাপারে কী-হবে? অসাধারণ! এই কথা শুনে পথিক-ব্যক্তিটি আনন্দিত হয়ে বলল, যতদিন পর্যন্ত উম্মাহর মধ্যে তোমার মতো মানুষ থাকবে, নেকড়েরা কখনও কোনো মেষকে আক্রমণ করবে না
 মেষপালকের এটা আদৌ জানা ছিল-না যে, সে যার সঙ্গে কথা বলছে, তিনি আমীরুল মুমিনীন হযরত উমর রা., যিনি মানুষের হৃৎস্পন্দন অনুভব করার জন্য সর্বদা সক্রিয় থাকতেন। আসলে সর্বক্ষেত্রে আল্লাহর স্মরণ হল একজন মুমিনের স্বতঃস্ফূর্ত ও স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া এবং একজন মুমিনের নিকট থেকে এই রকম মন্তব্যই স্বাভাবিক; কারণ সে-জানে, আল্লাহকে স্মরণ করার কী মূল্য! আজ আমরা প্রত্যক্ষ করছি, সর্বত্রই নেকড়েরা কেমন অবাধে মেষগুলোকে হত্যা করে চলেছে। কারো অজানা নয়, মুসলিম-বিশ্বের অধিকাংশ স্থানেই দুর্নীতি আজ একটি সাধারণ বিষয়। কিন্তু কেন? কারণ হল, আল্লাহকে স্মরণ রাখার মধ্যেই-যে পাপ ও দুর্নীতির প্রতিরোধ নিহিত, এই সহজ কথাটি আমরা অধিকাংশ মানুষ আজ বিস্মৃত হয়েছি।
আমাদের ইহজীবনের এই সফর সম্পর্কে কুরআন বলছে, এটা একটা ক্রমাগত পরিশ্রমের সফর, যার শেষে আমরা আমাদের মহান স্রষ্টার সাক্ষাতলাভে ধন্য হব।
হে মানুষ, কঠোর পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে তুমি তোমার সৃষ্টিকর্তার দিকে এগিয়ে যাচ্ছো; অতঃপর তুমি তাঁর সাক্ষাত লাভ করবে। (সূরা ইনফিতার : ৬)
যে-ব্যক্তি আল্লাহকে স্মরণ করে, সে-তার দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখে গন্তব্যের প্রতি। এই সফর খুবই শ্রমসাধ্য এবং এখানে চিত্তবিক্ষেপের সম্ভাবনাও বড় বেশি। শয়তান এবং আমাদের প্রবৃত্তি অব্যাহতভাবে চেষ্টা করছে আমাদেরকে বিপথগামী করতে। কিন্তু যারা সতর্ক ও জ্ঞানী, তাদের দৃষ্টি কখনোই গন্তব্য ও লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হয় না; এবং এরাই তারা, যাদের অন্তরে সর্বদা আল্লাহর কথা জাগরুক।
‘‘নিঃসন্দেহে, আসমানসমূহ ও যমীনের এই নিখুঁত সৃষ্টি এবং দিবারাত্রির আবর্তনের মধ্যে জ্ঞানীদের জন্য পর্যাপ্ত নিদর্শন রয়েছে। (আর এই জ্ঞানবান লোক হচ্ছে তারা) যারা দাঁড়িয়ে, বসে এবং শায়িত অবস্থায় সর্বদা আল্লাহ পাক-কে স্মরণ করে’’। (সূরা আল ইমরান : ১৯০-১৯১)
আল্লাহর স্মরণ অথবা যিকির মুসলমানদের জন্য শক্তির একটি উৎস। হাদীসে কুদ্সী-তে আল্লাহ পাক বলেন, আমি আমার বান্দার সঙ্গে ততক্ষণ থাকি যতক্ষণ সে আমাকে স্মরণ করে। (সহীহ বুখারী হাদীস : ৬৮৫৬)
এটা এইজন্য যে, অন্যান্য আনুষ্ঠানিক ইবাদত-বন্দেগী এবং যিকির-এর মধ্যে একটা পার্থক্য বিদ্যমান। অতিমাত্রায় আনুষ্ঠানিক ইবাদতের তেমন আবশ্যকতা নেই; এক্ষেত্রে কারো ইবাদত মাত্রাতিরিক্ত হয়ে না-ওঠে সে-বিষয়ে বরং সতর্কই করা হয়েছে। কিন্তু যিকির যেন বেশি-বেশি করা হয়, এই বিষয়টির প্রতি এমনভাবে তাগিদ দেওয়া হয়েছে, যাতে আমাদের অন্তর ও জিহবা সততই আল্লাহর স্মরণে নিয়োজিত থাকে। আমরা যেন কোনো অবস্থাতেই আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফেল ও উদাসীন হয়ে না-পড়ি। আর এই কাজে আমরা ক্লান্ত হতে পারি না, হওয়া উচিতও নয়। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, জান্নাতবাসীদের মনে কোনো-কারণেই কোনো দুঃখ থাকবে না; দুঃখ শুধু একটা কারণেই হবে,তা হল পার্থিব জীবনের যে-মুহূর্তগুলো তারা মহামহিমান্বিত আল্লাহ পাকের স্মরণ থেকে উদাসীন ছিল। (তবারানী-২০/৯৪)
এখন প্রশ্ন, আমরা কী-ভাবে আল্লাহকে স্মরণ করতে পারি, যখন আমরা তাঁকে দেখতে সক্ষম নই; এবং তাঁর সম্পর্কে আমাদের ধারণাকে আমরা দৃশ্যায়িত করতে পারি না?
এ-বিষয়ে দুটি উত্তর। প্রথম, আমরা তাঁর সৃষ্টির দিকে দৃষ্টিপাত করতে পারি, কারণ সৃষ্টিসমূহই স্মরণ করিয়ে দেবে স্রষ্টাকে। সূরা আল ইমরান থেকে গৃহীত পূর্বোক্ত আয়াতে এ-কথার উল্লেখ আছে; এবং আলকুরআনের বহু আয়াত এই একই-কথার সাক্ষ্য দিচ্ছে। মহাবিশ্বের যে-অকল্পনীয় বিশালতা, সেদিকে আমরা যত-বেশি লক্ষ্য করব, তার নির্মাণকর্তা মহান আল্লাহর কথা তত-বেশি মনে পড়বে। শুধু এইটুকু ভাবলেই শিহরিত হতে হয়, একটি বীজ অঙ্কুরিত হতেও কত বিবিধ শক্তির একত্রীভূত কী নিখুঁত সমন্বয়ই-না প্রয়োজন! কী-ভাবে এই বিশাল মহাবিশ্ব জটিল কিন্তু পূর্ণ-ভারসাম্য নিয়ে ক্রমাগত সম্প্রসারিত হচ্ছে, আর কী নিখুঁত এই ব্যবস্থাপনা! এই মহাবিশ্বের প্রতি ইঞ্চিতে-ইঞ্চিতে ক্ষুদ্র-বৃহৎ সরল ও জটিল যেখানে যা-কিছু আছে, সবাই সর্বত্র স্রষ্টার অস্তিত্ব ও উপস্থিতির কথা ঘোষণা করছে। বস্ত্তত, মহাবিশ্ব বাঁহরাবৎংব কথাটির আরবি-প্রতিশব্দ আলম, যা মূল ইলম বা জ্ঞান থেকে গৃহীত; এবং এ-থেকে স্রষ্টাকে জানার বিষয়টি অনেকখানি অর্থময় হয়ে ওঠে। অনেকটা খাতাম শব্দটির মতোই যার অর্থ মোহরাঙ্কিত করা। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত পশ্চিমা-সভ্যতা যখন বিজ্ঞানের উপর প্রাধান্য বিস্তার করল, তখন স্রষ্টার সঙ্গে মানুষের যে-সম্পর্ক ও সংযোগ,তা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ল। আলকুরআন উল্লেখ করছে, আকাশ ও যমীনে (আল্লাহর কুদরতের) কত (অসংখ্য) নিদর্শন রয়েছে, যার উপর দিয়ে মানুষের গমনাগমন, কিন্তু এতদসত্ত্বেও তারা কোনোরূপ মনোযোগ দেয় না (সূরা ইউসুফ : ১০৫)।
অতএব অদ্যকার মুসলিম বৈজ্ঞানিকদের প্রধান কাজ হল, স্রষ্টার সঙ্গে মানুষের এই নির্বোধ-সংযোগহীনতাকে দূর করা। আর এটাই-তো প্রজ্ঞার প্রকৃত নিদর্শন যে, একজন ব্যক্তি মহাবিশ্বের দিকে দৃষ্টিপাত করে এবং বলে সুবহানাল্লাহ, সকল মহিমা ও গৌরব একমাত্র আল্লাহর।
দ্বিতীয়ত, আমরা আমাদের জীবনে আল্লাহর রহমত ও অনুগ্রহের আশায় পুনঃপুনঃ প্রার্থনা জানাই। এই প্রার্থনা, এই আকুতি নিঃসন্দেহে অত্যন্ত মূল্যবান; কিন্তু এতদসঙ্গে সত্য ও বাস্তবতা হল, আল্লাহর রহমত দ্বারা পূর্ণরূপে পরিবেষ্টিত এই জীবন তাঁর অনুগ্রহ ছাড়া একটি মুহূর্তও চলতে পারে না। ঠিক এই মুহূর্তে কেউ হয়তো এই কথাগুলি পাঠ করছে। কিন্তু একটু বিরতি নিয়ে এ-বিষয়ে আমরা একটু ভেবে দেখতে পারি। মুদ্রিত অক্ষরগুলো শনাক্ত করতে চোখ সক্রিয় আছে, চোখে প্রতিফলিত কাগজের এই ছবিকে অর্থপূর্ণ বাক্যে রূপান্তরিত করার কাজে মস্তিষ্কও সক্রিয়; এবং এই কর্ম-সম্পাদনের জন্য আমাদের মনের শান্তি ও একাগ্রতার সঙ্গে সময়-ও প্রয়োজন, অথচ এর কোনোটাই আমাদের নিজস্ব নয়। তাহলে এগুলো আমরা কোথা থেকে পেলাম?
আমরা অধিকাংশই যথেষ্ট ভাগ্যবান যে, আমরা প্রতিদিনই আমাদের প্রয়োজনীয় খাদ্য পাচ্ছি। এ-বিয়টিকেও আমরা আমাদের বিবেচনায় আনতে পারি। কারণ খাদ্যদ্রব্যের উৎপাদন, আহারযোগ্য খাবার প্রস্ত্ততিকরণ, খাদ্যগ্রহণ, পরিপাকক্রিয়া ইত্যাদি মিলিয়ে আমাদের একগ্রাস খাবার মুখে তোলার মধ্যেও আল্লাহ পাকের কী-বিরাট রহমত-যে বিদ্যমান, আমরা-তো উপলব্ধি করতে পারি। এটাও প্রজ্ঞার পরিচায়ক যে, একজন ব্যক্তি এটা অনুভব করে এবং সকৃতজ্ঞচিত্তে বলে ওঠে আলহামদুলিল্লাহ, সকল প্রশংসা একমাত্র আল্লাহর।
সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহু আকবার এগুলি আল্লাহর যিকির-এর কিছু প্রচলিত ধরন। এগুলি উচ্চারণ করা মৌখিক যিকির; আর এগুলি অনুধাবন করা ও হৃদয়ে প্রতিফলন ঘটানো হল অন্তরের যিকির। এই দুটি ধরনই বিশেষভাবে মূল্যবান ও বাঞ্ছনীয়; এবং তারা একটি অপরটির মধ্যে শক্তি সঞ্চার করে। মৌখিকভাবে পুনঃপুনঃ উচ্চারণের কারণে শব্দগুলি হৃদয়পটে গভীরভাবে খোদিত হয়, অপরদিকে আন্তরিক উপলব্ধি ও অনুভূতির প্রতিফলন মৌখিক উচ্চারণকে জীবন্ত ও প্রাণময় করে তোলে এবং উভয়ে একসঙ্গে একীভূত হয়ে এই ইহজীবনের সফরকে এমনভাবে তাৎপর্যমন্ডিত করে তোলে, যা আমাদের দৃষ্টিকে প্রকৃত গন্তব্যের প্রতি তন্ময় ও সজাগ রাখতে সাহায্য করে। এই যিকির আল্লাহ পাকের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে গভীর ও শক্তিশালী ও অবিচ্ছেদ্য করে তোলে; এবং ফলত, প্রবৃত্তির সকল অসৎ-অনুচিত আকর্ষণ থেকে মুক্ত ও নিরাপদ হয়ে আমরা আমাদের হৃদয়ে নিবিড় প্রশান্তি অর্জন করতে পারি; এবং আমরা আশা করতে পারি, যে-ব্যক্তি সর্বদা আল্লাহ পাকের সঙ্গে সাক্ষাতের কথা স্মরণ করে, সময় যখন আসবে, সে বঞ্চিত হবে না।
একজন নিরক্ষর মেষপালক সঠিক উপলব্ধির মানদন্ডে একজন বিরাট-মাপের মানুষ; এবং পার্থিব-দৃষ্টিতে অনেক বড়-বড় মানুষ যারা আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফেল, আলোচ্য শিক্ষাদীক্ষাহীন এই মেষপালকের তুলনায় তারা কতই-না ক্ষুদ্র! অবশ্য বিষয়টি আমরা যদি সঠিকভাবে অনুধাবন করতে পারি। #
[Continue reading...]

Friday, March 29, 2013

পাদ্রি সেদরিক রিব রুট

- 0 comments

পাদ্রি সেদরিক রিব রুট

নও মুসলিম


 ইউরোপে ইসলাম-বিদ্বেষী মহলগুলোর ততপরতা দিনকে দিন জোরদার হওয়া সত্ত্বেও সেখানে ইসলামে দীক্ষিতের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। ফরাসি দৈনিক লা মন্ডের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, "ফ্রান্সে ইসলাম ও মুসলমানদের দমিয়ে রাখার জন্য উগ্র ইহুদিবাদী নানা গ্রুপ ও ডানপন্থী ফরাসি দলগুলোর ব্যাপক ততপরতা সত্ত্বেও এই দেশটিতে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় বইয়ের এবং সর্বাধিক বিক্রিত বইয়ের তালিকার শীর্ষে রয়েছে পবিত্র কুরআন। কয়েকদিন আগে একজন ফরাসি সাংবাদিক পবিত্র কুরআনের একটি কপি কেনার জন্য দেশটির মার্সাই, স্ট্রাসবুর্গ ও তুলুস শহরের বইয়ের বাজারের কয়েকটি বিখ্যাত দোকানে গিয়ে দেখেন যে, সেখানে কুরআনের সব কপি বিক্রি হয়ে গেছে। ফরাসি লাইব্রেরিগুলোর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মুসলমানদের ধর্মীয় গ্রন্থ পবিত্র কুরআন এখন ফ্রান্সের সবচেয়ে বিখ্যাত ও সবচেয়ে বেশি বিক্রিত বই। "
ডক্টর সেদরিক রিব রুট ছিলেন একজন অর্থোডক্স খ্রিস্টান পাদ্রি। তিনি একাধারে দক্ষ সঙ্গীত শিল্পী, পিয়ানো-বাদক, কবি ও সাহিত্যিক। সাহিত্য বিষয়ে তার লেখা কয়েকটি বইও প্রকাশিত হয়েছে। সবাইকে বিস্মিত করে ছয় বছর আগে তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। মুসলমান হওয়ার পর নিজের জন্য আহমদ আলী নামটি বেছে নেন সাবেক সেদরিক।
সেডরিক কাজ করতেন খ্রিস্ট ধর্ম সম্পর্কিত একটি গবেষেণা কেন্দ্রে। নানা ধর্ম সম্পর্কে পড়াশুনা করতে গিয়েই তিনি ইসলামের সৌন্দর্যে আকৃষ্ট হন এবং শেষ পর্যন্ত মুসলমান হন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন:
"খ্রিস্ট ধর্ম সম্পর্কিত একটি গবেষণা কেন্দ্রের কর্মী হিসেবে সব ধর্মগ্রন্থগুলো সম্পর্কে পড়াশুনা করা আমার জন্য জরুরি হয়ে পড়েছিল। যখন পবিত্র কুরআনের অনুবাদ পড়লাম, মনে হল অনুবাদের মধ্যে মূল বক্তব্য হয়তো পুরোপুরি স্পষ্ট হয়নি। তাই সিদ্ধান্ত নিলাম, আরবি ভাষা শেখব এবং এভাবে আমার জ্ঞান বাড়ানোর পদক্ষেপ নেব। এভাবে ইসলাম সম্পর্কে আরও পড়াশুনা করে শেষ পর্যন্ত এ ধর্ম গ্রহণ করি।  অবশ্য গত দুই শ বছরে ফ্রান্সে ইসলাম সম্পর্কে যে চিত্র তুলে ধরা হয়েছে তা হল, এ ধর্মটি একটি হিংস্র ধর্ম। পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলো ইসলামকে হিংস্রতা, হত্যাকাণ্ড, লুটপাট ও সন্ত্রাসে ভরপুর ধর্ম হিসেবে তুলে ধরছে।
আর এই চিত্র মোটেই প্রীতিকর নয়। অথচ এ সত্ত্বেও আমরা দেখছি যে ফরাসিরা ইসলামের সত্যতা বা বাস্তবতাগুলো সম্পর্কে ক্রমেই বেশি আগ্রহী হচ্ছে। অনেক ফরাসি নাগরিক পশ্চিমা সংবাদ মাধ্যমগুলোর  অসততার বিষয়টি বুঝতে পেরে ইসলাম সম্পর্কে বাস্তব অবস্থা জানতে আগ্রহী হচ্ছেন। আমি নিজে ইসলাম সম্পর্কে বাস্তব অবস্থা জানতে পেরেছি, অর্থাৎ এ ধর্ম যে সত্য ধর্ম তা বুঝতে সক্ষম হয়েছি।"
পবিত্র কুরআন ইসলামের সত্যতার এক অপূর্ব সনদ। এর ভাষা ও বক্তব্যের যৌক্তিকতা এবং সৌন্দর্য এত দুনির্বার যে ইসলামের প্রাথমিক যুগে মক্কার মুশরিকরা কুরআনের তিলাওয়াত শুনতে ভয় পেত। তারা ভাবত, কুরআনের 'যাদু-মাখা' বক্তব্য শুনলেই তাদের হৃদয় বিগলিত হয়ে যাবে। কিন্তু তারপরও কুরআনের বক্তব্যের আকর্ষণ প্রতিরোধ করা অসম্ভব হয়ে পড়েছিল। পবিত্র কুরআনের বক্তব্যের সেই আকর্ষণ এখনও বজায় রয়েছে।
এখনও প্রতিদিন বহু অমুসলমান আকৃষ্ট হচ্ছেন কুরআনের অশেষ সৌন্দর্যের টানে। খ্রিস্টান পাদ্রি রিব রুটও কুরআনের এই অশেষ সৌন্দর্যে অভিভূত হয়েছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন: "একজন খ্রিস্টান পাদ্রি হিসেবে অন্য ধর্মের পবিত্র গ্রন্থগুলো পড়তে গিয়ে কখনও হৃদয়ে কোনো গভীর পরিবর্তন বা আলোড়ন অনুভব করিনি। কিন্তু কুরআনের আরবি লেখাগুলোর ওপর চোখ পড়তেই ও পড়ে দেখার পর পরই হৃদয়ে বড় ধরনের পরিবর্তন ও চিন্তা-চেতনায় আমূল পরিবর্তন অনুভব করেছি। ফলে এ ধর্ম সম্পর্কে আরও জানতে আগ্রহী হই এবং আরব দেশের অনেক আলেমের সঙ্গে কথা বলি ও শেষ পর্যন্ত ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করি।"
সাবেক খ্রিস্টান পাদ্রি রিব রুট আরও বলেছেন,
"অন্য যে ঘটনা ইসলাম গ্রহণের পরিবেশ সৃষ্টি করেছে তা হল জর্দানের একজন নাগরিকের দিক-নির্দেশন। ইসলামী বই-পুস্তকের ওপর তার ব্যাপক জ্ঞান ছিল। তিনি  আমাকে সেইসব বই পড়তে উৎসাহ দেন। আধ্যাত্মিক রহস্যময় জ্ঞানের বই আমাকে দারুণভাবে আকৃষ্ট করে। এ সম্পর্কে আরও বেশি পড়াশুনা ও গবেষণা আমাকে এমন এক পর্যায়ে উপনীত করেছে যে এ পর্যায়ে আমি বিশেষ প্রশান্তি ও আধ্যাত্মিক আনন্দ অনুভব করছি। এই বিশেষ প্রশান্তি ও আনন্দ ভাষায় তুলে ধরা সম্ভব নয়। অথচ আমি বহু বছর ধরে এই প্রশান্তিরই সন্ধান করেছিলাম।"
ইসলাম ধর্ম গ্রহণের পর সাবেক খ্রিস্টান পাদ্রি রিব রুট মুসলমানদের শিয়া মাজহাবের প্রতি আকৃষ্ট হন। আমিরুল মুমিনিন হযরত আলী (আ.) শিয়া মাজহাবের শীর্ষ ব্যক্তিত্ব হওয়ায়  সাবেক রিব রুট বা  নও-মুসলিম আহমদ আলী এ মাজহাবের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছেন। শিয়া মুসলমানদের নির্ভরযোগ্য হাদিসগুলোও তাকে এ পথে টেনে নিয়েছে। এ প্রসঙ্গে সাবেক রিব রুট বা  নও-মুসলিম আহমদ আলী বলেছেন, হযরত আলী (আ.)এর মহান বৈশিষ্ট্যগুলো বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)এর নূর থেকেই আলোকিত হয়েছে।
দ্বিতীয় যে দিকটি সাবেক পাদ্রি রিব রুট বা  নও-মুসলিম আহমদ আলীকে শিয়া মাজহাবের দিকে আকৃষ্ট করেছে তা হল, এ মাজহাবের কাছে সংরক্ষিত নির্ভরযোগ্য ও অর্থপূর্ণ হাদিস। এইসব হাদিস শিয়া মাজহাবকে সমৃদ্ধ ও উন্নত করেছে বলে তিনি মনে করেন। রিব রুটের মতে শিয়া মাজহাব ইসলামী জ্ঞান-বিজ্ঞানকে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে এবং এ মাজহাবের ভেতরে জন্ম নিয়েছে উচ্চ মানের অনেক মুসলিম মনীষী। শিয়া আলেমদের বইগুলোকেও অনেক উন্নত মানের ও সমৃদ্ধ বলে মনে করেন সাবেক পাদ্রি রিব রুট বা  নও-মুসলিম আহমদ আলী।
মুসলমান হওয়ার কারণে নও-মুসলিম আহমদ আলীকে ছেড়ে চলে গেছেন তার অনেক সাবেক বন্ধু। কিন্তু এতে দমে যাননি তিনি। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন,
"আমি মুসলমান হওয়ার পর প্রথমেই তা প্রকাশ্যে সবাইকে জানাইনি। কারণ, আমার ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিরা কি প্রতিক্রিয়া দেখান সে ব্যাপারে আমি উদ্বিগ্ন ছিলাম। কিন্তু পারিবারিক সমাবেশে বা বন্ধুদের সঙ্গে উৎসব অনুষ্ঠানে যখন ইসলামে নিষিদ্ধ খাদ্যগুলো পরিহার করতাম তখন আমার বাবা ও বন্ধুরা ঠাট্টা করে বলতেন: তুমি কি মুসলমান যে এসব খাচ্ছ না? আমি পরিপূর্ণ ধীর-স্থিরভাবে বলতাম, হ্যাঁ, আমি মুসলমান। আমি আমার ধর্মকে তাদের ওপর চাপিয়ে দিতাম না। বরং তাদেরকে ধীরে ধীরে এই পরিবেশ মেনে নেয়ার সুযোগ দেই। যদিও এটা মেনে নেয়া তাদের জন্য ছিল খুবই কঠিন।"
ফ্রান্সের এই শিল্পী ও গুণী ব্যক্তিত্ব এখন নিজের শিল্পকে ইসলামের সেবায় নিবেদিত করছেন। শিল্প পবিত্র কুরআনসহ ইসলামের সব শিক্ষা প্রচারের উপযুক্ত মাধ্যম। বিশেষ করে তিনি সঙ্গীত-শিল্পকে ইসলাম প্রচারে ব্যবহার করছেন। ইসলামের ছোঁয়া তার শিল্পকর্মকে করেছে গভীর অর্থপূর্ণ ও সুপরিসর। সঙ্গীত এখন তার হাতের ছোঁয়ায় কেবলই বিনোদনের বিষয় নয়। পবিত্র কুরআন ও ইসলাম আহমদ আলীর ওপর প্রভাব ফেলেছে বলেই এই অগ্রগতি অর্জন সম্ভব হয়েছে।
[Continue reading...]

মুসলিম রোগী দেখে মার্কিন ডাক্তার অরিভিয়ার ইসলাম গ্রহণ

- 0 comments


মুসলিম রোগী দেখে মার্কিন ডাক্তার 
অরিভিয়ার  
ইসলাম গ্রহণ



সম্প্রতি মার্কিন শিশু ও নারী বিশেষজ্ঞ ডা. ইউ এস অরিভিয়া ইসলাম গ্রহণ করেন। নিজের ইসলাম গ্রহণ প্রসঙ্গে ডা. অরিভিয়া বলেন, আমি আমেরিকার একটি হাসপাতালে নারী ও শিশু বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করি। একদিন হাসপাতালে এক আরব মুসলিম নারী এলেন বাচ্চা প্রসবের জন্য। প্রসবের পূর্ব মুহূর্তে তিনি ব্যথায় কাতরাচ্ছিলেন। প্রসব মুহূর্ত ঘনিয়ে তাকে জানালাম, আমি বাসায় যাচ্ছি, আর আপনার বাচ্চা প্রসবের দায়িত্ব অর্পণ করে যাচ্ছি অন্য এক ডাক্তারের হাতে। মহিলা হঠাৎ কাঁদতে লাগলেন, দ্বিধা ও শঙ্কায় চিৎকার জুড়ে দিলেন, ‘না না, আমি কোনো পুরুষ ডাক্তারের সাহায্য চাই না। আমি তার কথা শুনে অবাক হয়ে গেলাম। এমতাবস্থায় তার স্বামী আমাকে জানালেন, সে চাইছে তার কাছে যেন কোনো পুরুষের আগমন না ঘটে। কারণ সে সাবালক হওয়া থেকে নিয়ে আজ পর্যন্ত আপন বাপ, ভাই ও মামা প্রভৃতি মাহরাম পুরুষ ছাড়া অন্য কেউ তার চেহারা দেখে নি।
আমি হেসে উঠলাম আর অপার বিস্ময় নিয়ে তাকে বললাম, অথচ আমি কিনা এমন এক নারী আমেরিকান, হেন কোনো পুরুষ নেই য তার চেহারা দেখ নি। অতপর আমি তার আবেদনে সাড়া দিলাম।
বাচ্চা প্রসবের পরদিন আমি তাকে সাহস ও সান্ত্বনা দিতে এলাম। পাশে বসে তাকে জানালাম, প্রসাবোত্তর সময়ে দাম্পত্যমিলন অব্যাহত রাখার দরু আমেরিকায় অনেক মহিলা অভ্যন্তরীণ সংক্রমণ এবং সন্তান প্রসবঘটিত জ্বরে ভোগেন। তাই এ সম্পর্ক স্থাপন থেকে আপনি কমপক্ষে চল্লিশ দিন বিরত থাকবেন। এ চল্লিশ দিন পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ এবং শারীরিক পরিশ্রম থেকে দূরে থাকার গুরুত্বও তুলে ধরলাম তার সামনে। এটা করলাম আমি সর্বশেষ ডাক্তারি গবেষণার ফলাফলের নিরিখে।  
অথচ আমাকে হতভম্ব করে দিয়ে তিনি জানালেন, ইসলাম এ কথা বলে দিয়েছে। প্রসবোত্তর চল্লিশ দিন পবিত্র হওয়া অবধি ইসলাম স্ত্রী মিলন নিষিদ্ধ করেছে। তেমনি এ সময় তাকে সালাত আদায় এবং সাওম পালন থেকেও অব্যাহতি দিয়েছে।
এ কথা শুনে আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম। বিস্ময়ে বিমূঢ় হলাম। তাহলে আমাদের এত গবেষণা আর এত পরিশ্রমের পর কেবল আমরা ইসলামের শিক্ষা পর্যন্ত পৌঁছলাম!!
আরেকদিন এক শিশু বিশেষজ্ঞ এলেন নবজাতককে দেখতে। তিনি শিশুর মায়ের উদ্দেশে বললেন, বাচ্চাকে যদি ডান কাতে শোয়ান তবে তা শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। এতে করে তার হৃদস্পন্দন স্বাভাবিক থাকে। শিশুর বাবা তখন বলে উঠলেন, আমরা সবাই সবসময় এ নিয়ম মেনে চলি। আমরা সর্বদা ডান পাশ হয়ে ঘুমাই। এটা আমাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত। এ কথা শুনে আমি বিস্ময়ে থ হয়ে গেলাম!!
এই জ্ঞান লাভ করতে আমাদের জীবনটাই পার করলাম আর সে কিনা তার ধর্ম থেকেই এ শিক্ষা পেয়ে এসেছে! ফলে আমি এ ধর্ম সম্পর্কে জানার সিদ্ধান্ত নিলাম। ইসলাম সম্পর্কে পড়াশুনার জন্য আমি এক মাসের ছুটি নিলাম এবং আমেরিকার অন্য শহরে চলে গেলাম, যেখানে একটি ইসলামিক সেন্টার রয়েছে। সেখানে আমি অধিকাংশ সময় নানা জিজ্ঞাসা আর প্রশ্নোত্তরের মধ্যে কাটালাম। অনেক আরব ও আমেরিকা মুসলমানের সঙ্গে উঠাবসা করলাম। আলহামদুলিল্লাহ এর কয়েক মাসের মাথায় আমি ইসলাম গ্রহণের ঘোষণা দিলাম। 



সম্পাদনা : ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
 

সূত্র : ইন্টারনেট
[Continue reading...]

ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে ঈদে মিল্লাদুন্নবী উদযাপন

- 0 comments
 
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ 
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম

ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে ঈদে মিল্লাদুন্নবী উদযাপন
রবিবার, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০১১

ুত্রঃ-



ইসলামের আদর্শ হযরত মোহাম্মদ (সঃ) এর নাম ও সুন্নাহ ছাড়া ইসলামকে জানা ও বোঝা অসম্ভব। মহান আল্লাহ কোরআনে বলেছেন, আল্লাহ পাক রাসূল (সঃ) কে মানবজাতির জন্য রহমত স্বরূপ পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন, যা আল্লাহ কোরআনে বলেছেন।

আল্লাহ ঈমানদারদের উপর অনুগ্রহ করেছেন যে, তাদের মাঝে তাদের নিজেদের মধ্যে থেকে নবী পাঠিয়েছেন। তিনি তাদের জন্য তাঁর আয়াত সমূহ পাঠ করেন। তাদেরকে পরিশোধ করেন এবং তাদেরকে কিতাব ও কাজের কথা  শিক্ষা দেন। বস্তুত তারা ছিল পূর্ব থেকেই পথ ভ্রষ্ট। (সূরা আল ইমরান, আয়াত ১৬৪)

প্রায় ১৪০০ বছর ধরে সারা বিশ্বের মুসলমানগণ ভক্তি ও আনন্দের সাথে রাসূল হজরত মোহাম্মদ (সাঃ) এর জন্মদিবস ১২ই রবিউল আউয়াল ”ঈদে মিল্লাদুন্নবী” উদযাপন করে আসছে। কোরআন ও হাদিসের কোথাও কি একথা বলা হয়েছে যে, ঈদে মিলাদুন্নবী ১২ই রবিউল আ্‌উয়াল বা অন্য কোন দিনে পালন করা ইসলামের বিরুদ্ধে? বরং পবিত্র কোরআনে আল্লাহ পাক হযরত আদম (আঃ) এর সৃষ্টি, হযরত ইসা (আঃ) এর  জন্ম সস্পর্কে বিস্তারিত বলেছেন। আল্লাহর  প্রায় সব নবী মোহাম্মদ (সঃ) এর আগমন সম্পর্কে তাদের নিজ নিজ অনুসারীদেরকে বলেছিলেন।

মোহাম্মদ (সঃ) হলেন আল্লাহ এবং মানবজাতির মধ্যে যোগসূত্র স্বরূপ। রাসূল (সঃ) কে ভালবাসা ঈমানের একটি অপরিহার্য অংশ। তাই আল্লাহ পাক কোরআনে রাসূল (সঃ) কে অনুসরণ করতে নির্দেশ দিয়েছেন-

বলুন যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাসো তাহলে আমাকে অনুসরণ কর, যাতে আল্লাহ তোমাদিগকে ভালোবাসেন এবং তোমাদিগকে তোমাদের পাপ মার্জনা করে দেন। আল্লাহ হলেন ক্ষমাকারী দয়ালূ। (সূরা আল-ইমরান, আয়াত-৩১)

এখানে নিদের্শ  এসেছে দুই দিক থেকে। একদিকে কেউ যদি সর্বশক্তিমাণ আল্লাহকে ভালোবাসতে চায় তবে তাকে অবশ্যই মোহাম্মদ (সঃ) কে অনুসরণ করতে হবে। অন্যদিকে, আল্লাহর ভালবাসা পেতে হলে রাসূল (সঃ) কে অনুসরণ করতে হবে। অর্থাৎ আল্লাহর ভালোবাসা পাওয়ার পূর্ব শর্ত হচ্ছে রাসূল (সাঃ) কে অনুসরণ করা।

নবী করিম (সঃ) বলেছেন- “ততক্ষণ পর্যন্ত কেউ মোমেন হতে পারবেনা যতক্ষন না আমি তার পিতামাতা, সন্তান ও অন্য সবাই থেকে প্রিয় হবো।” (সহীহ আল বুখারী)

সাধারণতঃ মানুষ তার আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবকে ভালোবাসে। এটি একটি স্বর্গীয় ভালবাসা যেখানে একজন মুমিন আল্লাহর পরে রাসূল (সঃ) সম্পর্কে সর্বোচ্চ ভালোবাসা হৃদয়ে পোষণ করে এবং সর্বোচ্চ সম্মান  দেয়। রবিউল আউয়াল মাসে এসব আশেকে রাসূল আনন্দের সাথে তাদের পথ প্রদর্শকের জন্মকে ঈদে মিল্লাদুন্নবী হিসেবে পালন করে থাকে। দুর্ভাগ্যবশতঃ আমাদের মধ্যে কেউ মুসলিম ভাইবোনদের এ বলে পরিচালিত করে যে, ঈদে মিল্লাদুন্নবী শির্‌ক বেদাত ইত্যাদি এবং মুসলিমদের সরাসরি ঈদে মিল্লাদুন্নবী উদযাপন থেকে বিরত থাকতে বলে। যাতে আল্লাহর অনুগ্রহ লাভ থেকে তারা বিরত হয়। আবার এটাও দেখা যায় যে, ঐসব লোক যারা মোহাম্মদ (সঃ) এর জন্ম দিবস পালন করতে বাধা দেয় তারাই আবার তাদের সন্তানদের জন্ম দিবস, আকিকা, খুশি ও উৎসাহের সাথে উদযাপন করে। তখন তারা ভুলে যায় তাদের দেয়া সকল শির্‌ক, বেদাত ফতোয়া। একই সাথে তারা তাদের বন্ধু বা আত্মীয়দের জন্মদিনে যেতেও কিছু মনে করে না।

উদ্দেশ্যঃ

এই লেখাটির উদ্দেশ্য হচ্ছে মুসলিম ভাইবোনদের বুঝানো যে, ঈদে মিল্লাদুন্নবী শরীয়তের বিরুদ্ধে নয়; বরং এটা ইসলামের প্রাণ। কেউ ঈদে মিল্লাদুন্নবী পছন্দ না করার অর্থ এই নয় যে ঈদে মিন্নাদুন্নবী উদযাপন করা ভুল। অন্যভাবে বলা যায় কেউ ইসলামের চর্চা না করার মানে এই নয় যে ইসলাম খারাপ।

ঈদে মিল্লাদুন্নবীর অনুষ্ঠানমালাঃ

যে সব বিষয় নিয়ে ঈদে মিল্লাদুন্নবীর অনুষ্ঠান সাজানো হয় সেগুলো নিম্নরূপ।

১। পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত

২। হাম্‌দ বা আল্লাহর গুণকীর্তন

৩। না’ত এ রাসূল বা রসূল (সঃ) এর গুণকীর্তন

৪। রসূল (সঃ) এর জীবন সম্পর্কে আলোচনা

৫। দরূদ শরীফ পড়া

৬। দোয়া ও মোনাজাত

৭। তাবারুক বা খাদ্য বিতরণ

এখন আমরা উপরের ৭টি বিষয় কোরআন ও হাদিসের আলোকে বিশ্নেষণ করে দেখবো এগুলো ইসলামের পক্ষে না বিপক্ষে। বিশ্লেষণের উদ্দেশ্য হলো প্রমাণ করা যে যদি সকল বিষয় শরীয়ত সম্মত হয় তাহলে সমস্ত বিষয়ই একত্রে (অনুষ্ঠানটি) গ্রহণযোগ্য হবে।

১। কোরআন তেলাওয়াত- পবিত্র কোরআন শরীফ তেলাওয়াত বা পড়ার ব্যাপারে কারও কোন আপত্তি নেই।

২। হামদ্‌- সর্বশক্তিমান আল্লাহর প্রশংসাই হচ্ছে হামদ্‌। বিশ্বজগতের প্রতিটি বস্তুই আল্লাহর তসবিহ পড়ে। আল্লাহর জিকির মুমিনের হৃদয়ে প্রশান্তি এনে দেয়। ফলে এব্যাপারে কারো কোন আপত্তি নেই।

৩। না’তে রাসূল (সাঃ)- না’তে রাসূল হলো ছন্দ বা কবিতার মাধ্যমে প্রিয় নবী (সাঃ) এর প্রশংসা করা। নবীজির প্রশংসা করা শির্‌ক বা বেদাত নয়।

পবিত্র কোরআন শরীফের নিম্নোক্ত আয়াতে আল্লাহ পাক মোহাম্মদ (সাঃ) এর সম্মান ও প্রশংসা করেছেন।

আল্লাহ ও তার ফেরেস্তাগণ নবীর প্রতি দরূদ প্রেরণ করেন। হে মুমিনগণ তোমরা নবীর প্রতি দরূদ ও সালাম বেশী করে প্রেরণ করো সম্মানের সহিত। (সুরা আহাযাব, আয়াত ৫৬)

আমি আপনাকে বিশ্ববাসীর জন্য রহমত স্বরূপ প্রেরণ করেছি। (সুরা আম্বিয়া, আয়াত ১০৭)

আল্লাহর নবী মুমিনের আত্মার চেয়েও কাছাকাছি। (সুরা আহাযাব, আয়াত ০৬)

যে লোক রাসুলের হুকুম মান্য করবে সে আল্লাহর হুকুম মান্য করবে। (সুরা নিসার, আয়াত ৮০)

যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসের আশা রাখে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে তাদের জন্য রসুলুল্লাহের মধ্যে উত্তম নমুনা রয়েছে। (সুরা আহাযাব, আয়াত ২১)

নিশ্চয়ই আমি আপনাকে বার বার আকাশের দিকে তাকাতে দেখি। অবশ্যই আমি আপনাকে সে কেবলার দিকে ঘুরিয়ে দিব যাকে আপনি পচ্ছন্দ করেন। (সুরা বাকারা, আয়াত ১৪৪)

উর্ধ্বে দিগন্তে অতঃপর নিকটবর্তী হল ও ঝুলে গেল তখন দুই ধণুকের ব্যবধান ছিল অথবা আরও কম। তখন আল্লাহ তার দাসের প্রতি যা প্রত্যাদেশ করবার তা প্রত্যাদেশ করলেন। রাসুলের অন্তর মিথ্যা বলেনি যা সে দেখলো। (সুরা নাজম, আয়াত ৭-৯)

মুমিনগণ। তোমরা নবীর কণ্ঠস্বরের উপর কণ্ঠস্বর উঁচু করো না এবং তোমরা একে অপরের সাথে যেরূপ উচ্চস্বরে কথা বলো তার সাথে সে স্বরূপ উচ্চস্বরে কথা বলোনা, এতে তোমাদের কর্ম নিস্ফল হয়ে যাবে এবং তোমরা তা টেরও পাবেনা। (সুরা হুজুরাত, আয়াত ২)

এবং আপণার পালনকর্তার নেয়ামতের কথা বলুন এবং প্রকাশ করুন। (সুরা আদদোহা, আয়াত ১১)

আর আমার বান্দারা যখন তোমার কাছে কিছু জিজ্ঞাসা করে আমার ব্যাপারে আমি রয়েছি সন্নিকটে। যারা প্রার্থনা করে তখন তাদের প্রার্থনা কবুল করে নিই। (সুরা বাকারা, আয়াত ১৮৬)

পবিত্র কোরআনে রাসূল (সাঃ) সম্পর্কে এ রকম সম্মান ও প্রশংসা অগণিত। হাদিসে আছে, রাসূল (সাঃ) নিজে হাসান বিন তাহবিদ (রাঃ) কে নির্দেশ দিয়েছেন তাকে প্রশংসা করে কবিতা পড়ার জন্য।

আমরা অবাক হই মুনকির-ই-মিলাদরা এখন কি ভাবছে আল্লাহ ও রাসূল (সাঃ) সম্পর্কে? আমরা যারা রাসূল (সাঃ) কে ভালোবসি তারা বিশ্বাস করি শরীয়ার ভিতরে থেকে কাউকে প্রশংসা করার অর্থ পরোক্ষভাবে আল্লাহকে ভালোবাসা যিনি সমস্ত বিশ্বজগতের সৃষ্টিকর্তা। উদাহরণ হিসাবে বলা যায় কেউ যদি কোন দালানের গঠন প্রনালীর প্রশংসা করে তবে তার মানে হলো পরোক্ষভাবে যারা এই গঠন প্রনালীর পেছনে সংশ্লিষ্ট তাদের প্রশংসা করা। যেমন নকশাবিদ, প্রকৌশলী, নির্মাতা। যদি কাউকে প্রশংসা করা শিরক বা বেদাত হয় তবে আমরা সবাই আমাদের পিতা-মাতা, পুত্র-কন্যা, শিক্ষক, নেতাকে যে কোন ভাবেই প্রশংসা করে পাপ করছি। সর্বশেষে যদি মুনকির-ই-মিলাদরা প্রমান করে কোরআনে আল্লাহ পাক রাসূল (সাঃ) এর প্রশংসা করার সীমারেখা টেনে দিয়েছেন তবে আমরা সেখানে থামবো কিন্তু কোরআন শরীফে আল্লাহ রাসূল (সাঃ) সম্পর্কে বলেছেন,

আমি আপনার আলোচনাকে সমুচ্চ করেছি। (সূরা আল ইনশিরাহ, আয়াত ৪)

যখন আল্লাহ মোহাম্মদ (সাঃ) কে স্মরণ করাকে বৃদ্ধি করেন তখন পৃথিবীতে কার শক্তি আছে তা কমাবার।

৪। রাসূল (সাঃ) এর জীবনী আলোচনা- মোহম্মদ (সাঃ) হলেন ইসলামের আদর্শ। কেউই মোহাম্মদ (সাঃ) এর নাম মোবারক ছাড়া ইসলাম সম্পর্কে বলতে পারবেনা। আল্লাহ ও মানবজাতির মাঝে তিনি হলেন যোগসূত্র। আমরা যতবারই ”লা- ইলাহা-” বলিনা কেন  আমরা মুসলমান হতে পারবনা যতক্ষন না আমরা ”মোহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ” বলব। এমনকি আমাদের নামাজ (যা একান্তই আল্লাহর জন্য) পরিপূর্ণ হবেনা যতক্ষন না আমরা ”আসালামু আলাইকা আইয়্যূহান্নাবীয়ূ”- তাশাহুদ পড়বো (আত্তাহিয়াতু পড়ার সময়)। যখন আল্লাহ তাআলা তার হাবীবের (সঃ) নাম তার নাম থেকে পৃথক করেননি তখন নবী (সঃ) এর নাম আমরা কিভাবে  বাদ দেব।  মোহাম্মদ (সঃ) না আসলে আজ পৃথিবীতে ইসলাম, নামাজ, রোজা, হজ্জ, যাকাত কিছুই থাকত না। তাই তো আল্লাহ তাআলা কোরআনে ঘোষনা করেছেন,

আল্লাহ ঈমানদারদের উপর অনুগ্রহ করেছেন যে, তাদের মাঝে তাদের নিজেদের মধ্যে থেকে নবী পাঠিয়েছেন। তিনি তাদের জন্য তাঁর আয়াত সমূহ পাঠ করেন। তাদেরকে পরিশোধ করেন এবং তাদেরকে কিতাব ও কাজের কথা  শিক্ষা দেন। বস্তুত তারা ছিল পূর্ব থেকেই পথ ভ্রষ্ট। (সুরা ইমরান, আয়াত-১৬৪)

এবং আপণার পালনকর্তার নেয়ামতের কথা বলুন এবং প্রকাশ করুন। (সুর আদদোহা আয়াত ১১)

বিশ্বাসীদের জন্য মোহাম্মদ (সঃ) সবচেয়ে হচ্ছেন বড় নেয়ামত। আল্লাহ পাক বিশ্বাসীদের তাঁর নেয়ামতের শুকর গুজার করার নিদের্শ দিয়েছেন। তাই আমরা ঈদে মিল্লাদুন্নবী পালন করার মাধ্যমে নবী (সঃ) এর বিভিন্ন দিক আলোচনা করে ইসলামের কথা সর্বত্র ছড়িয়ে দিব। প্রকৃতপক্ষে, বিশ্বাসীদের  জন্য ঈদে মিল্লাদুন্নবী (সঃ) হলো সত্যিকারের ঈদ। কেননা মোহাম্মদ (সঃ) ছাড়া ঈদুল ফিতর, ঈদুল আযহা কোনটাই হত না।

৫। সালাত (দরুদ) সালাম-

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বিশ্বাসীদের নিদের্শ দিয়েছেন মোহাম্মদ (সঃ) এর প্রতি সালাত ও সালাম পাঠানোর জন্য যা নিচের আয়াতে বলা হয়েছে।

আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতাগণ নবীর প্রতি দরুদ  প্রেরণ করেন। হে মুমিন তোমরাও নবীর প্রতি বেশী  করে দরূদ ও সালাম প্রেরণ কর। (সূরা আহ্‌জাব, আয়াত ৫৬)

হাদীসঃ

আবু মাসউদ আল আনসারী (রাঃ) বলেছেন, আমরা সাদ ইবনে ওবায়দাহ’র সাথে বসেছিলাম। যখন নবী (সঃ) আমাদের নিকট আসলেন তখন বশীর ইবনে সাদ বললেন, আল্লাহ আমাদের আপনার জন্য দোয়া করার নিদের্শ দিয়েছেন। কিন্তুু হে রাসূল (সঃ) আমরা তা কিভাবে করব ? রাসূল (সাঃ) এ কথা শুনে চুপ করে রইলেন এবং কিছু জিজ্ঞেস করা ঠিক হবে না ভেবে আমরা চুপ করে রইলাম। তখন রাসূল (সাঃ) বললেন, আল্লাহ, মোহাম্মদ ও তার পরিবারবর্গের উপর অনুগ্রহ করেছেন যা আল্লাহ ইব্রাহিমের পরিবারবর্গের উপর করেছেন। রহমত দান করেছেন মোহাম্মদ (সঃ) ও তার পরিবারবর্গের প্রতি আপনি (আল্লাহ) যা করেছেন পৃথিবীতে ইব্রাহিম (আঃ) এর পরিবারবর্গের প্রতি। আপনার এ কাজ প্রকৃতপক্ষে প্রশংসনীয় ও গৌরবময় এবং আভিবাদন যা আপনি জানেন। ( সহীহ মুসলিম)

শুক্রবারে আমার উপর বেশী বেশী দরূদ ও সালাম পাঠ করো। তখন ফেরেশতাগণ উপস্থিত থাকে আমার উপর পড়া প্রতিটি দরূদ ও সালামের জন্যে তাঁর (আল্লাহ) সাওয়াব আমার কাছে পৌঁছায় তোমাদের দরূদ পাঠ শেষ করার পূর্বেই। (আল-তিরমিজি)

উপরোক্ত হাদিস ও কোরআনের আয়াতের আলোকে বলা যায় মোহাম্মদ (সঃ)  এর  উপর দরুদ ও সালাম পাঠানো ব্যাতীত মুনকির-ই-মিলাদদের অন্য কোন পথ নেই। মুনকির-ই-মিল্লাদরা মিলাদ মাহফিলে মোহাম্মদ (সঃ) এর প্রতি দাঁড়িয়ে ও সরবে দরুদ পড়ার বিরোধিতা করে। প্রতিউত্তরে আমরা বলব কোরআন ও হাদিসে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সাঃ) কোন জায়গায় ইহা উল্লেখ করেননি যে কিভাবে এবং কতটা স্বরবে দরূদ ও সালাম জানাতে হবে। এটি সম্পূর্ণ বিশ্বাসীদের উপর নির্ভর করে যে তারা কি অবস্থায় এবং কতটা স্বরবে দরূদ ও সালাম জানাবে। দরূদ ও সালাম পাঠানোর ধরণ হতে পারে বসা, বিছানায় বা মাটিতে শোয়া অবস্থায় বা স্থির দাঁড়িয়ে। যেহেতু আমরা আল্লাহর পরেই মোহাম্মদ (সঃ) কে শ্রদ্ধা করি তাই মোহাম্মদ (সঃ) প্রতি দাঁড়িয়ে দরুদ ও সালাম পাঠ করাই সর্বোত্তম।

৬। দোয়াঃ

মুনকির-ই-মিলাদদের বিভিন্ন প্রকার মত রয়েছে। কেউ দোয়ায় বিশ্বাস করে কেউ করেনা। কেউবা বিশ্বাস করে আল্লাহ সব কিছুই জানেন। তাই দোয়ার প্রয়োজন নেই। অন্যদিকে কোরআনে আল্লাহ তা’আলা বিশ্বাসীদের নিম্নোক্ত দোয়া করার নিদের্শ দিয়েছেন-

আর আমার বান্দারা যখন তোমার কাছে জিজ্ঞাসা করে আমার ব্যাপারে আমি রয়েছি সন্নিকটে। যারা প্রার্থনা করে তখন তাদের প্রার্থনা কবুল করে নেই। (সূরা বাকারা, আয়াত ১৮৬)

তোমরা চির-প্রতিপালককে ডাকো কাকুতি-মিনতি করে এবং সঙ্গোপনে। (সূরা আরাফ, আয়াত ৫৫)

এমনকি আমাদের প্রিয় রাসূল (সঃ) সবসময় আল্লাহর কাছে দোয়া চেয়েছেন যদিও তিনি সকল পাপ ও দোষমুক্ত। আমরা কি আমাদের শিক্ষক মোহাদ্মদ (সঃ) থেকে বেশী উৎকৃষ্ট যে আমরা দোয়ার প্রয়োজনবোধ করি না। আসুন দেখি আল্লাহ তা’য়ালা ঐসব অহংকারী মুর্খদের সম্পর্কে কি বলেছেন-

এবং যারা যা দান করবার, তা ভীত, কম্পিত হৃদয়ে এ কারণে দান করে যে, তারা তাদের পালনকর্তার কাছে প্রত্যাবর্তন করবে, (সূরা মুমিন, আয়াত ৬০)

অতঃপর তাদের কাছে যখন আমার আযাব আসল, তখন কেন কাকুতি-মিনতি করল না ? বস্তুতঃ তাদের অন্তর কঠোর হয়ে গেল এবং শয়তান তাদের কাছে সুশোভিত করে দেখাল, যে কাজ তারা করছিল। ( সূরা আনআম, আয়াত ৪৩)

৭। মিষ্টি বা তাবারুক বিতরণঃ

মুনকির-ই মিলাদদের মিলাদের অনুষ্ঠানে মিষ্টি বিতরণে কি আপত্তি আছে ? তারা কি বিয়ে, অলিমা, আকিকা, তহবিল বৃদ্ধির বিভিন্ন অনুষ্ঠান বা জন্মদিনে গিয়ে খায়না? মিষ্টি বিতরণ ছাড়াই মিলাদ মাহফিল  পালন করা যেতে পারে। এটা মিলাদের আবশ্যকীয় অংশ নয়। কেউ অসমর্থ হলে বা তবারক বিতরণে আগ্রহী না হলে তবারক বিতরণ ছাড়াই মিলাদুন্নবী (সঃ) পালন করতে পারবে। মিষ্টি বা খাদ্য বিতরণ করা হয় ভালোবাসার চিহ হিসাবে। মাঝরাতে বাসায় ফিরে রান্না করতে অতিথিদের অসুবিধা হবে ভেবে রাতের খাবার দেয়া হয়।

মিলাদ মাহফিলের প্রতিটি বিষয় সম্পর্কে ব্যাখ্যা যা কোরআন ও হাদীস থেকে নেওয়া হয়েছে পরিস্ড়্গার প্রমান করে যে উপরোক্তভাবে সমবেত হওয়া ইসলাম বিরুদ্ধ নয় বরং এটা ইসলাম সম্পর্কিত যেখানে মুসলমান ভাই ও বোনেরা একত্রিত হয়ে আল্লাহ ও তার বন্ধু (সঃ) এর কথা শুনে।

একই উদ্দেশ্যে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সমবেত হওয়া যেমন লাইলাতুল কদর, শবে বরাত,  শবে মেরাজ যেখানে আল্লাহ ও তার রাসুলের কথা বলা হয় তা ভাল এবং সকল মুসলিমের সেসব অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন করা উচিত। যদি কেউ এটা পালন না করে তাহলে এসব মাহফিলের ফজিলত পাবেনা। কিন্তু কাউকে এসব মাহফিলে অংশগ্রহন করাকে বাধাগ্রস্থ করা যাবে না। মাহফিল সম্পর্কে কটুক্তি করা যাবে না। এসব মাহফিলকে কুফর, শিরক-বেদাত বলা যাবে না। যেহেতু এসব অনুষ্ঠানে সবাই ভালোর জন্য উপস্থিত হয় এবং সেখানে আল্লাহর জিকির, রাসূলের (সঃ) দরূদ, আল্লাহর ওলিদের জীবনী আলোচনা হয়।

এসব দোয়ার মাহফিলে অংশগ্রহন করাকে বাধাগ্রস্থ করা এবং মিলাদ মাহফিলকে বেদাত বলা হলো শয়তান ও তার সঙ্গীদের কাজ।

মিলাদ মাহফিল সম্পর্কে তিনটি আপত্তিঃ

১ম আপত্তিঃ মিলাদ মাহফিল রাসুল (সঃ) এর সময় ছিল না তাই এটা বেদাত (নতুন আবিস্ড়্গার)

২য় আপত্তিঃ সৌদিআরবে যেহেতু ঈদে মিলাদুন্নবী অনুষ্ঠিত হয় না তাই এটা ভুল। এটা একটি ভারতীয় বিষয়।

৩য় আপত্তিঃ ১২ই রবিউল আউয়াল মোহাম্মদ (সঃ) এর ওফাত দিবস তাই এটা শোকের দিন উৎসবের নয়।

সাধারন মানুষ যাদের ধর্মীয় জ্ঞান কম উপরোক্ত তিনটি আপত্তির মাধ্যমে তারা সহজেই বিভ্রান্ত হয়ে মুনকির-এ-মিলাদদের ফাঁদে পড়তে পারে। এখানে উপরের তিনটি আপত্তির যুক্তি খন্ডন করা হয়েছে যাতে ভবিষ্যতে মুনকির-এ-মিলাদরা সহজ-সরল মুসলিম নর-নারীদের বিপথে পরিচালিত করতে না পারে। নিমের্ন আলোচনা থেকে বোঝা যাবে মিলাদ মাহফিল সম্পর্কে মুনকির-ই-মিলাদদের দাবী সঠিক নাকি ভুল।

১ম আপত্তির জবাবঃ মোহাম্মদ (সাঃ) ও সাহাবাদের সময়ে প্রতিদিনই মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হতো। বর্তমানে হয়তো উদযাপনের ধরনের কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। কিন্তু বিষয়বস্তু  একই তা হলো কোরআন ও হাদিসের শিক্ষা ছড়িয়ে দেয়া। (কোরআন ও সুন্নাহ মাহফিল)।

রাসূল (সাঃ) প্রতি সোমবার রোজা পালনের মাধ্যমে নিজের জন্ম দিবস পালন করতেন। কেন তিনি প্রতি সোমবার রোযা রাখেন এ প্রশ্নের উত্তরে নবীজি (সঃ) বললেন, “আমি জন্মেছি সোমবারে এবং কোরআন নাজিলও হয়েছে সোমবারে” (সহীহ মুসলিম)। যারা মিলাদ মাহফিলের বিরোধিতা করে তারা মেসকাত শরীফের একটি হাদীস উল্লেখ করে যেখানে নবী (সঃ) বলেছেন “যে কেউ আমাদের ধর্মে একটি নতুন ধারনার পরিচয় দেয় যা প্রশ্নবিদ্ধ হয় তবে তা বাতিল বলে গন্য হবে।” তিনি আরো বলেন “ নতুন কিছূ থেকে সাবধান, প্রতিটি নতুন কিছুই (কুল্লু বিদাত) ভুল পথে পরিচালিত করে।”

কিন্তু ঐসব ভন্ড মুনকির-ই মিলাদরা কখনো একই বইয়ের অন্য হাদিস উল্লেখ করে না যা নতুন কিছুকে সমর্খন দেয়। মেশকাত শরীফের “বাবুল এলমে” বলা হয়েছে “যিনি ইসলামে একটি সুন্দর (ভাল কাজের) দৃষ্টান্ত রাখবেন তার জন্য রয়েছে সুন্দর পুরষ্ড়্গার পাশাপাশি তারাও পুরৃড়্গত হবেন যারা একাজের অনুসরণ করবে। আর যারা খারাপ দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করবে তারা তার দায় বহন করবে এবং  যারা এ কাজের অনুসরন করবে তারাও সে কাজের দায় বহন করবে।” (মেশকাত শরীফের)

এই হাদীস থেকে আমরা ইসলামে কোরআন ও হাদীসের সাথে সম্পর্কযুক্ত একটি নতুন পথের সন্ধান পেতে পারি যা মানুষকে পুরস্ড়্গারের দিকে আগ্রহী করে তোলে।

যদি আমরা মনে করি  সব নতুন কিছুই বেদাত তা হলে মুনকির-ই মিলাদরা নিম্নোক্ত নতুন আবিস্ড়্গারের ব্যাপারে কি বলবে যা নবীজি (সঃ) এর সময়ে ছিল না-

একত্রে ৩০ পাড়া কোরআন

শুক্রবারে জুম্মায় সানী আজান (খুতবার আগে)

জামাতে ২০ রাকাত তারাবীর নামাজ

হাদীস সংকলণ

কিছু ভাল বিদাত আমাদের প্রতিদিনের ধর্মীয় কর্মকান্ডে (বিদাতে হাসানা)

ইসলামে এমন এবাদত খুব কমই আছে যাতে বেদাতে হাসানা নেই। নিম্নের আলোচনা থেকে তা বোঝা যাবে।

ইমানঃ প্রতিটি মুসলিম শিশু ”ঈমানে মোজাম্মেল” এবং ”ঈমানে মুফাচ্ছেল” শিক্ষা করে অথচ এ নামের কোন ঈমানের চর্চা নবী (সঃ), সাহাবা, তাবেইন ও তাবে-তাবেঈনদের যুগে ছিল না।

কলেমাঃ প্রতিটি মুসলমান ৬টি কালিমা মুখস্ত রাখেন। এই ৬ কলেমার গননা, গননার ধরন যেমন ১ম, ২য়, ৩য় ইত্যাদি বলা বেদাত যা ইসলামের শুরুর দিকে ছিল না।

কোরআনঃ কোরআনকে ৩০ পাড়ায় ভাগ করা,  পারাকে রুকুতে ভাগ করা, তাতে জের, জবর, পেশ দেয়া, অফসেট কাগজে কোরআনকে মুদ্রিত করা বেদআত যা ইসলামের শুরুতে দেখা যায় নি।

হাদীসঃ বইয়ের আকারে হাদীস সংগ্রহ করা, বর্ণনাকারী রাবীর তালিকা নির্ণয়, হাদিস গুলোকে সহীহ, জয়ীফ, মৌজু, মোয়াল্লাদ ইত্যাদি হিসেবে বিশিস্টায়িত করা, হাদীসের সাহায্যে প্রতিষ্ঠিত নিদের্শ যেমন মাকরুহ, মোস্তাহাব ইত্যাদি সবই বেদাত বলে গন্য হবে যা নবী (সঃ) এর সময়ে ছিল না।

হাদীসের মুলনীতিঃ (উসুল এ হাদীস) জ্ঞানের সব শাখা ও এর নিয়ম সমূহ হল বেদআতে হাসানা।

ফিকহঃ বর্তমান সময়ে আমদের দৈনন্দিন জীবনে সবকিছুই নির্ভর করছে এই জ্ঞানের উপর। কারন এর ভেতরেই আছে জীবনের সবকিছুর নিয়ম ও নির্দেশ। এটিও বেদআতে হাসানা।

উসুলে ফিকহ এবং ইলম-ই কালামঃ জ্ঞানের এই দুইটি শাখা পাশাপাশি এর মূলনীতি ও নিষেধ সমূহ বেদআতে হাসানা।

সালাতঃ নিয়্যত (আবৃতি) করে নামাজ আরম্ভ করা। রমজান মাসে ২০ রাকাত তারাবীহ নামাজ জামায়াতে পড়া, ইফতারের দোয়া, সেহরির নিয়্যত দোয়া সবই বেদআতে হাসানা।

যাকাতঃ বর্তমানে কাগজের ও ধাতব মুদ্রার মাধ্যমে যে যাকাত দেওয়া হয় তা বেদআত। কারণ ইসলামে শুরুর শতাব্দীতে তা প্রচলিত ছিল না।

হজ্জ্বঃ হজ্জ্ব পালন করতে গিয়ে যান্ত্রিক যানবাহন যেমন উড়োজাহাজ, জাহাজ, বাস, ট্যাস্কি এবং গাড়িতে চড়ে আরাফাতের ময়দানে যাওয়া সবই বেদআত কারণ এসব সুযোগ সুবিধা সমূহ তখন আবিষ্কৃত হয়নি।

বিদাতে হাসানা যখন ইমান ও কলেমা পরিচয় করে দিয়েছে তখন আমরা এসব থেকে দুরে থেকে কি ভাবে সাফল্য লাভ করব।  তাই আমাদের একমত হওয়া উচিৎ যে, সকল বেদাতই হারাম নয়। এবং ঐ বেদাত হারাম যার সাথে কোরআন ও সুন্নাহর অসংগতি রয়েছে।

দুনিয়াবী ব্যাপারে বেদআতঃ আমাদের চারপাশে যে সব নতুন আবিষ্ড়্গার দেখি যা ইসলামের প্রথম ৩০০ বছর পর্যন্ত দেখা যায়নি।  সেসবের সাথে আমরা এমনই অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি যে সেসব ছাড়া আমাদের জীবন যাপন কঠিন হয়ে পড়বে। প্রত্যেকে ট্রেন, গাড়ী, উড়োজাহাজ,  ঘড়ি, বিদুøত এবং অনেক কিছুই ব্যবহার করতে বাধ্য। এগুলো ছাড়া জীবন কল্পনাই করা যায় না। এ সবই বেদআত যা নবীজি (সঃ) এর সময় বা সাহাবীদের সময় খুঁজে পাওয়া যাবে না।

মুনকির-ই মিলাদরা বর্তমান সময়ে বেদআত সম্পর্কে কি বলবে যা আমাদের ধর্মীয় কর্মকান্ডের অংশ হয়ে গেছে। যেমন জুম্মা ও প্রতিদিনের নামাজে ও বক্তব্য দেওয়ার জন্য স্পিকার ও মাইক্রোফোনের ব্যবহার ।

মসজিদ মাদ্রাসা বানানোর উদ্দেশ্যে হোটেলে রাত্রের খাবার আয়োজন করে অর্থ সংগ্রহ করা

তারা কেন উপরোক্ত নতুন আবিষ্কার সমুহ ব্যবহার করার উপর শিরক, কুফর, বেদাতের ফতোয়া দেয় না যা ইসলামে বর্তমানে ব্যবহৃত হচ্ছে। এটা বলা যাবে না যে, মুনকির মিলাদরা স্পিকার ব্যবহার করে না এবং তহবিল বৃদ্ধির অনুষ্ঠানের আয়োজন বা অংশগ্রহন করে না।

আধুনিক সময়ের কিছু খারাপ বেদআত ( বেদআতে সাইয়্যেয়া) যা ইসলাম বিরুদ্ধ যা থেকে দুরে থাকা উচিত। কিন্তু মুনকির মিলাদদের মাধ্যমে যা চর্চ্চা হচ্ছে ফলে দুর্ভাগ্যবশতঃ কিছু নিরীহ মুসলমান বিভ্রান্তিতে পড়ছে।

মাথা অনাবৃত অবস্থায় নামাজ পড়া (টুপি না পড়ে নামাজ আদায়)

নামাজ পড়ে হাত না তুলে দোয়া চাওয়া

চাঁদ না দেখে রোজা শুরু করা, ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহার অগ্রীম ঘোষনা দেয়া

উপরের প্রতিটি কাজই ইসলামের নতুন খারাপ আবিষ্কার যা বেদাতে সাইয়া। কারণ এসব জিনিস গ্রহণ করে একজন ইসলামে নতুন  আবিষ্কারের পরিচয়ই করালো না বরং একই সময়ে সে নবীজি (সঃ)  সুন্নাহকে অগ্রহ্য করল যা সরাসরি আল্লাহর নির্দেশ অমান্যের সামিল।

২য় আপত্তির জবাবঃ এটা খুবই দুর্ভাগ্যের ব্যাপার যে দুনিয়াবী ব্যাপারে আমরা মানসিক ভাবে পশ্চিমা ঘেষা এবং ধর্মীয় ব্যাপারে আরব ঘেষা। কোরআন মজিদ নাজিল হয়েছে আরবে এবং আরবীয়রা কথা বলে আরবীতে। এজন্যে আমাদের শ্রদ্ধা রয়েছে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে তারাই শ্রেষ্ঠ বা ইসলামের সব। অন্যদিকে কোরআন ও হাদিসের কোথাও আল্লাহ ও রসূল (সঃ) বলেননি যে মুসলমানদের সৌদি আরব, আরব, অনারবদের অনুসরন করতে হবে। কোরআন ও হাদিসের সব জায়গায় বলা হয়েছে যে আল্লাহ ও তার নবী (সাঃ) এর সুন্নাহকে অনুসরন করা। এটাও মনে রাখতে হবে যে নবীজি (সাঃ) তার বিদায়ী ভাষণে বলেছিলেন “আরব অনারবের উপর নয়, অনারব আরবের উপর নয়। তোমরা সবাই সমান শুধুমাত্র ধর্ম ভক্তি ও ভাল কাজ ছাড়া।”

এখন সৌদি সরকার নবীজি (সাঃ) এর জন্মদিবস পালন করেনা। অথচ যদি ৮৫ বছর আগের সৌদিআরবের দিকে লক্ষ্য করা হয় তখন ছিল হিজাজ-আল-মুকাদ্দাস (অটোম্যান সাম্রাজ্য) ঐ সময় আরবীয়রা স্বতঃস্ফূর্তভাবে মিলাদুন্নবী (সাঃ) উদযাপন করতো। এখন সৌদি আরব ও তার কিছু বন্ধু রাষ্ট্র ছাড়া সমগ্র আরব জাহানের মিশর, সিরিয়া, ইরাক, জর্দান, মরক্কো, লেবানন, আলজেরিয়া, নাইজেরিয়া, তিউনিসিয়া, ইয়েমেন, সুদান, লিবিয়ায় একই সাথে ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপিত হয়। আল্লাহ  আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন তার রাসূলের (সাঃ) অনুসরন করার, কোন নির্দিষ্ট দেশকে নয়।

৩য় আপত্তির জবাবঃ বিগত ১৪০০ বছর ধরে ইসলামের সকল আলেম একমত যে নবী (সাঃ) এর জন্মদিবস ১২ই রবিউল আউয়াল। এখানে নবী (সাঃ) এর ওফাত দিবস নিয়ে দ্বিমত রয়েছে। কেউ বলেছেন ২য় রবিউল আউয়াল কেউবা ৩য় রবিউর আউয়াল। তাই নবী (সাঃ) এর জন্ম দিবস ওফাত দিবসের মতো নয়। অতএব ১২ই রবিউল আউয়াল শোকের দিন নয় বরং এটা উদযাপনের দিন। যদি আমরা ধরি ১২ রবিউল আউয়াল নবী (সাঃ) এর ওফাত দিবস তাহলে সকল মুসলমান জানেন যে ইসলামে শোকের জন্য তিনদিন রাখা হয়েছে। (হাদিস) কিন্তু এখন নবী (সাঃ) এর ওফাতের ১৪০০ বছরের উপর হয়েছে তাই আমরা শোকের পরিবর্তে জন্মদিবস পালন করবো।

রাসূল (সাঃ) একটি হাদিসে বলেছেন, তাঁর আগমনও রহমতের, ওফাতও রহমতের।

নবী (সাঃ) এর ওফাত এজন্যে রহমতের যে প্রতি শুক্রবার তাঁর উম্মতের আমল নামা তাঁর নিকট পেশ করা হয়। যখন তিনি তাঁর উম্মতের ভালো কিছু দেখেন তখন খুশী হন আর যখন খারাপ কিছু দেখেন তখন তাকে ক্ষমার জন্যে দোয়া করেন।

ইসলামের বিশ্বাস এই যে, আল্লাহর নবীরা জীবিত অবস্থায় তাঁদের রওজা মোবারকে বিশ্রাম করছেন এবং আল্লাহর রিজিক প্রাপ্ত হচ্ছেন (কবর ও জীবিত অবস্থা সম্পূর্ণ আলাদা, তুলনা করা চলবেনা)। আমাদের জন্যে কালেমা, ”লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ মোহাম্ম্‌দুর রাসুলুল্লাহ” (অর্থঃ আল্লাহ ছাড়া কোন মা’বুদ নাই, মোহাম্মদ (সাঃ) আল্লাহর প্রেরিত রাসূল) এটুকুই যথেষ্ট। এটা বিশ্বাস করার জন্যে যে মোহাম্মদ (সাঃ) তাঁর রওজা মোবারকে জীবিত অবস্থায় আছেন। কারন মোহাম্মদ (সাঃ) হচ্ছেন আল্লাহর রাসূল। এটা বলা হয়না যে তিনি ছিলেন আল্লাহর রাসূল। কারন একজন মৃত ব্যক্তির ক্ষেত্রে ”হচ্ছেন” ব্যবহার করা যায়না।

কোরআন হাদিস থেকে নেয়া নিম্নের আয়াতগুলো প্রমাণ করে নবী (সাঃ) জীবিত।

আমি আপনাকে বিশ্ববাসীর জন্য রহমতস্বরূপ প্রেরণ করেছি। (আল-কোরআন সূরা ২১, আয়াত ১০৭)

আল্লাহর রাসূল বলেন, ”শুক্রবারে আমার উপর বেশী বেশী দরূদ ও সালাম পাঠ করো। তখন ফেরেশতাগণ উপস্থিত থাকে। আমার উপর পড়া প্রতিটি দরূদ ও সালামের জন্যে তাঁর (আল্লাহ) সাওয়াব আমার কাছে পৌঁছায় তোমাদের দরূদ পাঠ শেষ করার পূর্বেই।” তখন আমি জিজ্ঞাসা করলাম, এটা কি তাঁর মৃতুøর পরেও প্রযোজ্য হবে। তখন তিনি উত্তরে বললেন, ”আল্লাহ এই জমিনকে নবীদের দেহ নষ্ট করা হারাম করেছেন এবং আল্লাহর নবীরা জীবিত এবং আল্লাহ সে ব্যাবস্থা করেন।” (আল-তিরমিজি)

“আমার ওফাতের পরে আমার রওজা জিয়ারতে আসা মানে আমার জীবিত অবস্থায় আমার সামনে আসা।” (সহীহ হাদিস)

“যখন কেউ হজ্জ্ব পালন করে আমার রওজা জিয়ারতের জন্যে আসবে তা আমার জীবিত অবস্থায় আমার সামনে আসার মতো হবে।” (সহীহ হাদিস)

ভেবে দেখুন

কোরআন তেলাওয়াত কি ইসলাম সম্মত হচ্ছে ?

হামদে বারী তায়ালা কি ইসলাম সম্মত হচ্ছে ?

নাতে রাসূল কি ইসলাম সম্মত হচ্ছে ?

রাসূল (সাঃ) এর জীবনী সম্পর্কে ব্যাখা কি ইসলাম সম্মত হচ্ছে ?

রাসূল (সাঃ) কে দুরূদ পাঠানো কি ইসলাম সম্মত হচ্ছে ?

দোয়া চাওয়া কি ইসলাম সম্মত হচ্ছে ?

খাদ্য বিতরণ কি ইসলাম সম্মত হচ্ছে ?

আওলাদে মুজাদ্দেদ মোহঃ আমের আলি সিদ্দিকী
[Continue reading...]
 
Copyright © . A-Tasauf is the holy place of Mind . - Posts · Comments
Theme Template by BTDesigner · Powered by Blogger