৮- বৈধ কাজগুলো ইবাদতে রূপান্তরিত হওয়া :
ইবাদত ও কাজে-কর্মে বান্দার একনিষ্ঠতা এবং
বিশুদ্ধ নিয়ত তার পার্থিব কর্মগুলোকে উঁচু স্তরে উন্নীত করে এবং পরিণত করে গ্রহণযোগ্য
ইবাদতে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বললেন-
وفي بضع أحدكم صدقة، قالوا يارسول الله
أيأتي أحدنا شهوته ويكون له فيها أجر؟ قال: أرأيت لو وضعها في حرام أكان عليه وزر
؟ فكذلك إذا وضعها في الحلال كان له أجر أخرجه مسلم : 1006
আর তোমাদের স্ত্রীদের সাথে যৌনকর্মেও রয়েছে
সদকার ছাওয়াব। সাহাবাগণ বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাদের কেউ যদি তার যৌন
চাহিদা পূর্ণ করে তাহলে কি পুরস্কার? তিনি বললেন, আচ্ছা তোমরা কী মনে কর? ; যদি কেউ অবৈধ পন্থায় যৌন চাহিদা মেটায় তাহলে
তার কি পাপ হবে? এমনিভাবে যদি কেউ বৈধ পন্থায় তার যৌন চাহিদা পূর্ণ করে তাহলে পুরস্কার পাবে। (বর্ণনায় : মুসলিম)
কেন সে বৈধ পন্থায় যৌন চাহিদা মেটালেও সওয়াব
পাবে? কারণ সে কাজটি করার
সময় এ ধারণা করেছে যে, আমি বৈধ পন্থায় কাজটি
করে সেই অবৈধ পন্থা থেকে বেঁচে থাকব, যেখানে আল্লাহ আমার প্রতি অসন্তুষ্ট হবেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের এ অসন্তুষ্টি থেকে বেঁচে থাকার মাধ্যমে
আমি তার প্রতি একনিষ্ঠ (মুখলিছ) হতে পারব। আর এ ইখলাছ প্রসূত ধারণার কারণেই তার সামান্য মানবিক চাহিদা মেটানোর কাজটাও সওয়াবের
কাজ হিসাবে আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে যাবে।
হাদীস থেকে আরেকটি দৃষ্টান- :-
قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : إنك
لن تنفق نفقة تبتغي بها وجه الله إلا أجرت عليها حتى ما تجعل في فم امرأتك)
.أخرجه
البخاري)
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বলেছেন : তুমি যা কিছু আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের নিয়্যতে খরচ করবে অবশ্যই তার পুরস্কার
পাবে। এমনকি, তুমি যা কিছু তোমার স্ত্রীর মুখে দিয়েছ তারও
সওয়াব পাবে। (বর্ণনায় : বুখারী)
স্ত্রী সন্তানদের জন্য খরচ করা পারিবারিক
ও সামাজিক দায়িত্ব। এখানে পাপ-পুণ্যের কী আছে? তবু দেখুন, যদি কোন ব্যক্তি তার স্ত্রী সন্তানদের জন্য
খরচ করার সময় আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের নিয়্যত করে তাহলে সে সওয়াব ও পুরস্কার পেয়ে
যাচ্ছে।
এমনিভাবে যদি কেউ নিজের খাওয়া-দাওয়ার জন্য
ব্যয় করে এবং এর সাথে আল্লাহর সন্তুষ্টির নিয়্যত করে, তাহলে সে সওয়াব লাভ করছে। শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন, যে ব্যক্তি কোন বৈধ মানবিক চাহিদা মেটাতে
গিয়ে ইবাদত-বন্দেগীতে সামর্থ হাসিলের নিয়্যত করবে তার এ চাহিদা পূরণের কাজটা আল্লাহর
কাছে ইবাদত হিসেবে কবুল হবে ও সে এতে সওয়াব পাবে। (মজমু
আল-ফাতাওয়া: ইবনে তাইমিয়া)
যেমন আপনি নিয়্যত করলেন যে, আমি এখন বাজারে কেনা-কাটার জন্য যাব। কিন্তু আমার উদ্দেশ্য হল, এ কেনা-কাটার মাধ্যমে আমি খেয়ে-দেয়ে যে শক্তি অর্জন করব তা আল্লাহর আদেশ-নিষেধ
পালনের ক্ষেত্রে ব্যয় করব। ব্যস! আপনার এ নিয়্যতের
কারণে বাজারে কেনা-কাটা করাটা আপনার ইবাদত হিসেবে গণ্য হবে। এটাইতো ইখলাছ বা আল্লাহর প্রতি একনিষ্ঠ হওয়া।
ইখলাছ যেমন সাধারণ বৈধ কাজকে ইবাদতে রূপান-রিত
করে, তেমনি রিয়া বা লোক
দেখানো উদ্দেশ্য ইবাদতকে বরবাদ করে প্রতিফল শূন্য করে দেয়।
যেমন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন :-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا لَا
تُبْطِلُوا صَدَقَاتِكُمْ بِالْمَنِّ وَالْأَذَى كَالَّذِي يُنْفِقُ مَالَهُ
رِئَاءَ النَّاسِ وَلَا يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآَخِرِ . (البقرة : 264)
হে মুমিনগণ! দানের কথা বলে বেড়িয়ে এবং ক্লেশ
দিয়ে তোমরা তোমাদের দানকে ঐ ব্যক্তির ন্যায় নিস্ফল করো না, যে নিজের ধন লোক দেখানোর জন্য ব্যয় করে এবং
আল্লাহ ও পরকাল দিবসে ঈমান রাখে না। (সূরা বাকারা : ২৬৪)
অর্থাৎ, দানের কথা বলে বা খোঁটা দিয়ে যেভাবে দানের
প্রতিফলকে ধ্বংস করা হয়, তেমনি মানুষকে দেখানোর
বা শুনানোর জন্য দান করলে আল্লাহর কাছে তার প্রতিদান পাওয়া যায় না। বাহ্যিক দিক দিয়ে যদিও মনে হবে সে আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য
দান করেছে,
কিন্তু তার উদ্দেশ্য
হল মানুষের প্রশংসা অর্জন। মানুষ তাকে দানশীল
বলবে, তার দানের কথা প্রচার
হলে মানুষ তাকে সমর্থন দেবে-ইত্যাদি।
সাহাবী উবাদাহ ইবনু সামেত রা. কে এক ব্যক্তি
বলল, আমি আমার এ তলোয়ার
দিয়ে যুদ্ধ করব। এর মাধ্যমে আমি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করব
ও মানুষের প্রশংসা পাব। উবাদাহ তাকে বললেন, তুমি কিছুই পাবে না। তুমি কিছুই পাবে না। তৃতীয়বার উবাদাহ রা. বললেন, আল্লাহ বলেছেন
: আমি শিরক ও অংশীদার থেকে বে-পরোয়া। যে ব্যক্তি আমার জন্য
করা হয় এমন কোন কাজে আমাকে ব্যতীত অন্য কাউকে শরীক করল আমি তার থেকে সম্পর্কমুক্ত। আমাকে ছাড়া যার জন্য সে করেছে সেটা তারই জন্য বিবেচিত। (এহইয়া উলূমুদ্দীন: লিল-গাযালী )
0 comments:
Post a Comment