الحمد لله رب العالمين والصلاة والسلام
على أشرف الأنبياء والمرسلين محمد وعلى آله وأصحابه أجمعين.
أخلص دينك يكفيك العمل القليل
তোমার দ্বীনকে খাঁটি কর তাহলে অল্প আমল নাজাতের
জন্য যথেষ্ট হবে।
এটি হাদীস হিসেবে অনেকের কাছে পরিচিত। সনদ-সূত্রের দিক দিয়ে দুর্বল। যদি হাদীসটির অর্থ এমন হয় যে, অল্প আমল ইখলাছের সাথে
করা হলে তা কবুল হবে আর বেশী আমল করা হল অথচ তাতে ইখলাছ থাকল না তাহলে কোন লাভ নেই-তবে
হাদীসটির ভাবার্থ গ্রহণ করতে কোন দোষ নেই। মোটকথা, অল্প আমল করতে উৎসাহ দেয়া হয়নি বরং আমল যতই করা হোক, ইখলাছের তা সাথে করতে বলা হয়েছে।
ইখলাছ অবলম্বন বড় কঠিন কাজ। আমার কাছে সালাত, সিয়াম, হজ ও জিহাদের চেয়ে ইখলাছ অবলম্বন খুব কঠিন
মনে হয়। কোন কাজের শুরুতে ইখলাছের উপর থাকব-এমন দৃঢ়
সংকল্প করেও ইখলাছের উপর অটল থাকা যায় না।
এমনও দেখা গেছে যে, কোন ব্যক্তি ইখলাছ অবলম্বনের গুরুত্ব সম্পর্কে
আলোচনা করলেন। পরে নিজেকে প্রশ্ন করলেন তুমি যে এত সুন্দর
করে এতক্ষণ ইখলাছ সম্পর্কে বক্তব্য রাখলে তা কি ইখলাছের সাথে করেছ? না অন্য কোন নিয়্যত ছিল? আমানতদারীর সাথে এ প্রশ্নের উত্তর দিলে দেখা
যাবে আসলে ইখলাছের এ আলোচনা ইখলাছের সাথে হয়নি। অন্য কোন উদ্দেশ্য ছিল; লোকেরা কমপক্ষে আমাকে
মুখলিছ ভাববে অথবা অন্য কাউকে জব্দ করা যাবে কিংবা উপস্থিত সুধীজন জানবে আমি এ বিষয়ে
বেশ পন্ডিত-ইত্যাদি ইত্যাদি ভাবনা তার ভিতর ক্রিয়াশীল ছিল।
একটা উদাহরণ দেয়া যেতে পারে। একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিয়মিত মসজিদে এসে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত
জামাতের সাথে আদায় করেন। আর ইমাম ও মুয়াজ্জিন কোন ভুল করলে বা কাজে
অলসতা করলে তিনি শুধরে দেয়ার চেষ্টা করেন। এ কাজ তিনি শুধু আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার নিয়তে ইখলাছের সাথে করেন। তিনি মনে করেন, এটা তো আমার চাকুরী নয় বা আমাকে কেউ দায়িত্ব
দেয়নি। আমি কষ্টটুকু করছি আল্লাহরই জন্য। তাই এখানে ইখলাছ ছাড়া অন্য কিছুর অসি-ত্ব নেই। একদিন তিনি সবার আগে মসজিদে আসলেন। দেখলেন এক স্থানে ময়লা রয়ে গেছে, ভালমত পরিস্কার করা হয়নি। তিনি নিয়্যত করলেন মুয়াজ্জিনকে ধমকে দেবেন। পরোক্ষণে চিন্তা করলেন, আমি যদি এখন মুয়াজ্জিনকে বকা দেই তাহলে কেউ
শুনবে না। আরো দু চার জন লোক মসজিদে আসুক তাদের উপস্থিতিতে
আমি মুয়াজ্জিনকে বকা দেব যাতে তারাও শুনবে ও জানবে, আমি এ বিষয়ে কত তৎপর ও মুয়াজ্জিন লোকটার শিক্ষাটা
ভাল হবে। সামনের ইলেকশনে আমাকে মসজিদ কমিটির কোন এক
ভাল পদে মনোনয়ন দেয়া হতে পারে।
তিনি তা-ই করলেন। যখন আরো মুসল্লীরা আসলেন তিনি মুয়াজ্জিন সাহেবকে ডেকে বললেন, মুয়াজ্জিন সাব আপনি সারা দিন কি করেন? কিসের ধান্ধায় থাকেন? এখানে কতখানি ময়লা! আপনার চোখে পড়েনি? আজ কি আপনি মসজিদ ঝাড়ু দিয়েছেন? সারা দিন খান ও ঘুমান, কোন কাজ করেন না।
সম্মানিত পাঠক! তিনি প্রথমে নিয়্যত ভালই করেছিলেন। পরে তার নিয়্যতের বিচ্যুতি ঘটেছে। তিনি যদি তার এ কাজটি ইখলাছের সাথে করতেন তবে তার ভাষা মার্জিত হত। তিনি সম্মানের সাথে কথা বলতেন। মুয়াজ্জিন বেচারা এত মানুষের সামনে অপমানিত হতেন না। তিনিও সমাজে বদ-মেজাজি লোক বলে পরিচিত হতেন না। আর আল্লাহর কাছে এ কাজের পুরস্কার! সে তো অনেক দূরে। বরং, এ কাজের প্রতিদানে শাস্তি লাভের সম্ভাবনা সৃষ্টি হল। সওয়াব লাভের দিক দিয়ে আমলটি বৃথা গেল।
তাই তো দেখা যায় কোন কাজের শুরুতে ইখলাছ অবলম্বন
একটা কঠিন কাজ। আবার ইখলাছের মাধ্যমে নিয়্যতটা ঠিক করে নিলে
এর উপর অটল থাকা আরেকটি চ্যালেঞ্জ। এ কারণে রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বার বার এ ব্যাপারে সতর্ক করে বলেছেন : আমি ভয় করি
! আমি সতর্ক করি...।
যেমন একবার তিনি বললেন :-
আমি কি তোমাদের এমন বিষয় সম্পর্কে অবহিত করবো
না যাকে আমি দাজ্জালের চেয়ে বেশী ভয় করি? আমরা বললাম, অবশ্যই আপনি আমাদের বলে দেবেন। তিনি বললেন : তা হল সুক্ষ্ম শিরক, যা এমন যে, কোন ব্যক্তি সালাত আদায় করতে দাঁড়িয়ে যায়
আর খুব সুন্দর করে সালাত আদায় করে কিন্তু মনে মনে অন্যকে দেখানোর ভাবনা লালন করে।
দাজ্জালের ধোঁকা থেকে বেঁচে থাকা কত কঠিন!
রিয়া বা লোক দেখানো ভাবনা থেকে মুক্ত থেকে ইখলাছের উপর অটল থাকা এর চেয়েও কঠিন।
তাই ইখলাছ সম্পর্কে এ বইটির অনুবাদ করা জরুরী
মনে করছি।
আরবী ভাষায় বইটি সংকলন করেছেন আমাদের উস্তাদ
সৌদী আরবের প্রাজ্ঞ আলেম, বিদগ্ধ গবেষক ফয়সাল
বিন আলী আল-বাদানী। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, এটি এ বিষয়ে একটি জামে ও মানে উপস্থাপনা। যদি কেউ আমাদের এ বইটি পড়ে ইখলাছ অবলম্বনে উৎসাহী হন তাহলে আমাদের বইটির উদ্দেশ্য
স্বার্থক বলে ধরে নেব।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে প্রার্থনা তিনি
আমাদের সকলকে ইখলাছ ও বিশুদ্ধ নিয়্যতে সকল ভাল কাজ তাঁরই উদ্দেশ্যে নিবেদন করার তাওফীক
দান করুন। এমনিভাবে সকল অন্যায় ও পাপাচার থেকে বিরত
থাকতে পারি যেন তাঁরই সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য। আমীন!
আব্দুল্লাহ শহীদ আব্দুর রহমান
0 comments:
Post a Comment