৯- ইখলাছপূর্ণ নিয়্যতের মাধ্যমে পরিপূর্ণ
আমলের সওয়াব অর্জন :
কোন কোন সময় মানুষ ইখলাছ ও বিশুদ্ধ নিয়্যতে
কাজ করতে উদ্যোগী হয়, কিন্তু তার সম্পদের সীমাবদ্ধতা, শারীরিক দুর্বলতা-ইত্যাদি কারণে কাজটি সমাধা
করতে পারে না। কখনো দেখা যায়, উক্ত ভাল কাজটি করার জন্য সে প্রবল প্রচেষ্টা
চালিয়েছিল, কিন্তু কোন কারণে কাজটি আঞ্জাম দিতে পারেনি। এমতাবস্থায় সে কাজটি সম্পন্ন করার সওয়াব পেয়ে যাবে। এবং তার ইখলাছের কারণে কাজটি যারা করতে পেরেছে তাদের সমমর্যাদা লাভ করবে।
যেমন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বলেছেন :
إن أقواما خلفنا بالمدينة ما سلكنا شعبا
ولا واديا إلا وهم معنا، حسبهم العذر . أخرجه البخاري : 2839
আমরা কয়েকটি দলকে মদীনায় রেখে এসেছি। তারা আমাদের সাথে কোন পাহাড় অতিক্রম করেনি, কোন উপত্যকাও মাড়ায়নি। অথচ তারা আমাদের সাথে অংশগ্রহণকারীর মর্যাদা লাভ করবে । অক্ষমতা তাদেরকে আটকে রেখেছে। (বর্ণনায় : বুখারী)
হাদীসে বর্ণিত সাহাবীগণ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে অভিযানে অংশ নিতে পারেননি কোন অসুবিধার কারণে। কিন্তু তাদের বিশুদ্ধ নিয়্যত ও ইখলাছ ছিল অভিযানে অংশ নেয়ার জন্য। তাই তারা অংশ গ্রহণ না করেও অংশগ্রহণকারীদের সম-মর্যাদার অধিকারী
হবেন।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
আরো বলেন :-
من أتى إلى فراشه وهو ينوي أن يقوم يصلى
من الليل، فغلبته عيناه حتى أصبح كتب له ما نوى وكان نومه صدقة عليه من ربه عز وجل .أخرجه
النسائي 258 وصححه الألباني
যে ব্যক্তি শেষ রাতে তাহাজ্জুদ আদায় করবে-এ
নিয়্যতে শুয়ে পড়ল। অবশেষে নিদ্রা তাকে কাবু করে ফেলল এবং সকাল হওয়ার আগে জাগতে পারল না। এমতাবস্থায় সে যা নিয়্যত করেছিল তা তার জন্য লেখা হয়ে যাবে। এবং এ নিদ্রা তার প্রভুর পক্ষ থেকে দান হিসেবে ধরা হবে। (বর্ণনায় : নাসায়ী)
তাহাজ্জুদের নিয়্যত করেও এ ব্যক্তি তাহাজ্জুদ
পড়তে পাড়ল না বটে কিন্তু ইখলাছ ও বিশুদ্ধ নিয়্যতের
কারণে সে তাহাজ্জুদের পূর্ণ সওয়াব পাবে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
আরো বলেন :-
من سأل الشهادة بصدق بلغه الله منازل
الشهداء وإن مات على فراشه .أخرجه مسلم 1909
যে বিশুদ্ধ মনে জিহাদে শরীক হয়ে আল্লাহর কাছে
শহীদ হওয়া কামনা করবে, আল্লাহ তাকে শহীদের
মর্যাদা দান করবেন যদিও সে বিছানায় মৃত্যুবরণ করে। (বর্ণনায় : মুসলিম)
ইখলাছ বা আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার লক্ষ্যে
যে শহীদ হওয়ার আকাঙ্খা করবে, সে শহীদ না হতে পারলেও আল্লাহ তাকে তার ইখলাছের কারণে শহীদের মর্যাদা দান করবেন।
আরেকটি হাদীস উল্লেখ করা যেতে পারে। তা হল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন
:-
قال رجل لأتصدقن الليلة بصدقة، فخرج
بصدقته فوضعها في يد زانية، فأصبحوا يتحدثون : تصدق الليلة على زانية، قال أللهم
لك الحمد على زانية، لأتصدقن بصدقة فخرج بصدقته فوضعها في يد غني فأصبحوا يتحدثون
: تصدق على غني، قال : أللهم لك الحمد على غني، لأتصدقن بصدقة، فخرج بصدقته فوضعها
في يد سارق، فأصبحوا يتحدثون : تصدق على سارق، فقال أللهم لك الحمد على زانية وعلى
غني وعلى سارق فأتي، فقيل له : أما صدقتك فقد قبلت، أما الزانية فلعلها تستعف بها
عن زناها، ولعل الغني يعتبر فينفق مما أعطاه الله ولعل السارق يستعف بها عن سرقته .أخرجه
البخاري 1421: ومسلم: 1022
এক ব্যক্তি নিয়্যত করল, আমি রাতে কিছু ছদকা (দান) করব। যখন রাত এল সে ছদকা করল। কিন্তু ছদকা পড়ল এক ব্যভিচারী
মহিলার হাতে। সকাল হলে লোকজন বলতে শুরু করল, গত রাতে জনৈক ব্যক্তি এক ব্যভিচারীকে ছদকা
দিয়েছে। এ কথা শুনে দানকারী বলল, হে আল্লাহ ! ব্যভিচারীকে ছদাক দেয়ার ব্যাপারে
তোমারই প্রশংসা। আমি রাতে আবার একটি ছদকা করব। পরের রাতে যখন সে ছদকা করল, তা পড়ল একজন ধনীর হাতে। যখন সকাল হল তখন লোকজন বলাবলি শুরু করল গত রাতে জনৈক ব্যক্তি
এক ধনীকে ছদকা দিয়েছে। এ কথা শুনে দানকারী বলল, হে আল্লাহ! ধনীকে ছদকা দেয়ার ব্যাপারে তোমারই
প্রশংসা। আমি রাতে আবার একটি ছদকা করব। যখন পরের রাতে সে ছদকা করল, তা পড়ল একজন চোরের হাতে। যখন সকাল হল তখন লোকজন বলতে শুরু করল, গত রাতে এক ব্যক্তি এক চোরকে ছদকা দিয়েছে। এ কথা শুনে দানকারী বলল, হে আল্লাহ! ব্যভিচারী, ধনী ও চোরকে ছদকা দেয়ার ব্যাপারে তোমারই প্রশংসা। তখন আল্লাহর পক্ষ থেকে তাকে বলা হল তোমার সকল ছদকা (দান)-ই কবুল
করা হয়েছে। সম্ভবত তোমার ছদকার কারণে ব্যভিচারী মহিলা
তার পতিতাবৃত্তি থেকে ফিরে আসবে। ধনী ব্যক্তি আল্লাহর
পথে ব্যয় করতে উৎসাহী হবে। চোর তার চুরি কর্ম
থেকে ফিরে আসবে। (বর্ণনায় : বুখারী ও মুসলিম)
দেখুন, এ ব্যক্তি তার ছদকা বা দান করার ব্যাপারে
এতটাই ইখলাছ (আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার নিয়্যত) গ্রহণ করেছিল যে, ছদকা প্রদানে তার অতি গোপনীয়তা কাউকেই বিষয়টি
সম্পর্কে জানতে দেয়নি। এ গোপনীয়তা রক্ষার কারণে বার বার এ ছদাক অনাকাংখিত
হাতে পরলেও সে তার ইখলাছ থেকে সরে আসেনি। ইখলাছ অবলম্বনে ছিল অটল। ফলে তার কোন দান ব্যর্থ
হয়নি।
ইবনে হাজার রহ. বলেন, এ হাদীস দ্বারা বুঝে আসে দানকারী নিয়্যত বিশুদ্ধ
থাকলে তার দান অনাকাংখিত স্থানে পড়লেও তার দান বা ছদকা আল্লাহর কাছে কবুল হবে। (ফাতহুল বারী : ইবনে হাজার)
0 comments:
Post a Comment