Wednesday, March 27, 2013

তাসাওউফ আত্মাকে আলোকিত করে।




তাসাউফ' বা আধ্যাত্মিক জ্ঞান হচ্ছে এমন একটি জ্ঞান যে জ্ঞানের দ্বারা আল্লাহকে চেনা যায়, আল্লাহকে পাওয়া যায়, আত্মাকে আলোকিত করা যায়।


ইসলামী শরিয়াতের দৃষ্টিকোন থেকে ইলমে তাসাওউফের গুরুত্ব অপরিসীম।তাসাওউফ ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।একে অস্বীকার করা যায়না।কারন তাসাওউফ ব্যাতিত মানবতার আধ্যাত্নিক উতকর্ষ সাধিত হতে পারে না।প্রবিত্র কোরআন এবং হাদীসের মাধ্যমে রসুল (সা:)এই বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেছেন।আমি নিন্মে ইলমে তাসাওউফের সংজ্ঞা,উতপত্তি ও প্রসারের ইতিহাস আলোচনা করলাম।

তাসাওউফ এর পরিচিতি।


তাসাওউফ শব্দ লিখতে তা-ছোয়াদ-ওয়াও এবং ফা শব্দ লাগে যার উচ্চারণ হল তাসাওউফ।এউ শব্দটি তাফা-উল এর মাসদার যার মূল অক্ষর হল ছোয়াদ-ওয়াও এবং ফা এর আভীধানিক অর্থ হল,সূফীবাদ,আধ্যাত্নবাদ,আধ্যাত্নিকতা।অর্থাত কলবের অপবিত্রতা থেকে প্রবিত্র থাকা। পারিভাষিক সংঙ্গাতে তাসাওউফ হল অন্তর কে আল্লাহর সাথে মিলানো আল্লাহ যে ভাবে চান। তবে তাসাওউফ শব্দটির মূল কি এই নিয়ে বিভিন্ন মত রয়েছে।যেমন দায়েরাতুলমাআরেফাত গ্রন্থকার আল্লামা বুসতানী (র) বলেন :-তাসাওউফ শব্দটি আছছুফু শব্দথেকে নির্গত যার অর্থ হল-পশম,লোম wool ইত্যাদি ।আর তাদেরকে সূফী বলাহয় এই কারনে যে,তারা অহংকারী পোষাক তথা নিজের বরত্ব বিলিন করে আল্লাহর আদেশ পালনকারীর সব প্রচেস্টাই নিজেকে নিয়জিত রাখে।েআর তারা অহংকারী পোষাকের বিপকরত পোষাক পরিধান করে।মূলত তাদের জীবন আল্লাহর আদেশ এবং রসুল (স:)এর আদশ্যের উত্তম প্রকাশ।



করা যায়। সুফিবাদ বা সুফী দর্শন একটি ইসলামিক এমন দর্শন যা আত্মা অবস্থা সম্পর্কিত আলোচনা মুখ্য বিষয়। আত্মার পরিশুদ্ধির বা তাজকিয়ায়ে নফস এর মাধ্যমে আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনই হলো এই দর্শনের মুলকথা। পরম সত্তা মহান আল্লাহ কে জানার এবং চেনার আকাঙ্খা মানুষের চিরন্তন। স্রষ্টা ও সৃষ্টির মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্ককে আধ্যাতিক ধ্যান ও কোর্আন হাদীসের জ্ঞানের মাধ্যামে জানার প্রচেষ্টাকে হল সূফী দর্শন বা সূফীবাদ । হযরত ইমাম গাজ্জালী(রঃ) এর মতে, "আল্লাহর ব্যাতীত অপর মন্দ সবকিছু থেকে আত্মাকে কোর্আন হাদীসের আলোকে তাজকিয়ায়ে নফস এর মাধ্যমে প্রবিত্র করে সর্বদা আল্লাহর আরাধনায় নিমজ্জিত থাকা এবং সম্পূর্ন রূপে আল্লাহুতে নিমগ্ন হওয়ার নামই সূফী বাদ । "‘সুফ অর্থ পশম আর তাসাওউফের অর্থ পশমী বস্ত্রে পরিধানের অভ্যাস - অতঃপর কোর্আন হাদীসের জ্ঞানের মাধ্যামে মরমীতত্ত্বের সাধনায় কাহারও জীবনকে নিয়োজিত করার কাজকে বলা হয় তাসাওউফ। যে নিজেকে এইরূপ সাধনায় সমর্পিত করেন ইসলামের পরিভাষায় তিনি সুফি নামে অভিহিত হন।’ ইসলামি পরিভাষায় সুফিবাদকে তাসাওউফ বলা হয়, যার অর্থ আধ্যাত্মিক তত্ত্বজ্ঞান। তাসাওউফ বা সুফিবাদ বলতে অবিনশ্বর আত্মার পরিশুদ্ধি বা তাজকিয়ায়ে নফস এর মাধ্যমে আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে সাধনাকে বুঝায়। আত্মার পবিত্রতার মাধ্যমে ফানাফির রাসুল তারপর ফানাফিল্লাহ আল্লাহর সঙ্গে অবস্থান করা এবং ফানাফিল্লাহর মাধ্যমে বাকাবিল্লাহ (আল্লাহর সঙ্গে স্থায়িভাবে বিলীন হয়ে যাওয়া) লাভ করা যায়। যেহেতু আল্লাহ নিরাকার, তাই তাঁর মধ্যে ফানা হওয়ার জন্য নিরাকার শক্তির প্রতি প্রেমই একমাত্র মাধ্যম। তাসাওউফ দর্শন অনুযায়ী এই সাধনাকে আমরা‘তরিকত’ বা আল্লাহ-প্রাপ্তির পথ বলা হয়। তরিকত সাধনায় একজন পথপ্রদর্শকের প্রয়োজন হয়।এই পথের স্তর হলো ফানা ফিশ্‌শাইখ, ফানা ফিররাসুল ও ফানাফিল্লাহ। ফানাফিল্লাহ হওয়ার পর বাকাবিল্লাহ লাভ হয়। বাকাবিল্লাহ অর্জিত হলে একজন সুফি আল্লাহ প্রদত্ত বিশেষ নিয়ামত লাভ করেন আর এই অবস্থাই সুফির অন্তরে সার্বক্ষণিক শান্তি ও আনন্দ বিরাজ করে। হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) স্বয়ং এই দর্শনের প্রবর্তক। তিনি বলেন, মানবদেহে একটি বিশেষ অঙ্গ আছে, যা সুস্থ থাকলে সমগ্র দেহ পরিশুদ্ধ থাকে, আর অসুস্থ থাকলে সমগ্র দেহ অপরিশুদ্ধ হয়ে যায়। জেনে রাখো এটি হলো কল্‌ব বা হূদয়। আল্লাহর জিকর বা স্মরণে কল্‌ব কলুষমুক্ত হয়। সার্বক্ষণিক আল্লাহর স্মরণের মাধ্যমে কল্‌বকে কলুষমুক্ত করে আল্লাহর প্রেমার্জন সুফিবাদের উদ্দেশ্য তবে এই জিকির জাগতিক সকল কাজে আল্লাহক আদেশ নিষেধ মানার মাধ্যমে অর্জন হয়। যাঁরা তাঁর প্রেমার্জন করেছেন, তাঁদের তরিকা বা পথ অনুসরণ করে ফানাফিল্লাহর মাধ্যমে বাকাবিল্লাহ অর্জন করাই হলো সুফিদর্শন। চারটি প্রধান তরিকা সর্বাধিক প্রসিদ্ধি লাভ করে:যেমনঃ-


১)হযরত বড় পীর আব্দুল কাদির জিলানী (রঃ) প্রতিষ্ঠিত কাদেরিয়া তরিকা, ২)হযরত সুলতানুল হিন্দ খাজা মু’ঈনুদ্দীন চিশতি (রঃ) প্রতিষ্ঠিত চিশতিয়া তরিকা,
৩)হযরত খাজা বাহাউদ্দিন নকশবন্দী (রঃ) প্রতিষ্ঠিত নকশবন্দিয়া তরিকা এবং ৪)হযরত শেখ আহমদ মুজাদ্দিদ-ই-আলফে ছানী সারহিন্দী (রঃ) প্রতিষ্ঠিত মুজাদ্দিদিয়া তরিকা।
এছাড়া আরও ৩০০টির বেশি তরিকার সম্পর্কে জানা যায় য়েনন সুহ্‌রাওয়ার্দিয়া, মাদারীয়া, আহমদিয়া ও কলন্দরিয়া ইত্যাদি।
মওলানা জালালুদ্দীন রুমী (রঃ)-এর মতে এলমে তাসাউফ অর্জনের জন্য নিম্নোক্ত শর্তগুলো মেনে চলতে হবেঃ
(১) আল্লাহর সংগে পুনর্মিলনের জন্য মানবাত্মার অবিশ্রান্ত ক্রন্দন;
(২) নবী করিম (সঃ)-এর প্রতি অসীম ভালবাসা পোষণ করা;
(৩) আউলিয়া কেরামদের মাধ্যমে আল্লাহ ও রসুল (সঃ)-এর প্রেম হাসিল করা;
(৪) আল্লাহকে পাওয়ার জন্য সার্বজনীন প্রেমের আশ্রয় গ্রহণ করা;
(৫) পীর বা দীক্ষাগুরুর সমীপে যাওয়া;
(৬) দুনিয়ার মধ্যে থেকে মুক্তির সন্ধান লাভ করা;
(৭) প্রেম ও আধ্যাত্মিক সর্বক্ষেত্রে যুক্তির অবতারণা স্বীকার করা;
(৮) প্রকাশ্যভাবে জিকির আজকার করার সময় আধ্যাত্মিক সংগীত ও বাদ্যযন্ত্রের আশ্রয় নেয়া;
(৯) খোদার একত্বে পরিপূর্ণ বিশ্বাসী হওয়া।

কাযী সানাউল্লাহ পানিপথী (রাঃ) তাফসীরে মাজহারীতে লিখেছেনঃ
করণীয় ও বর্জনীয় বাতেনী তথা আধ্যাত্নিক আমলসমুহ যেগুলোকে ইলমে তাসাউফ বলা হয়, সে সম্পর্কিত জ্ঞ্যান অর্জন করা প্রত্যেক মুসলমানের উপর ফরজে আইন বিদ্যার অন্তরভুক্ত। অধুনা ইলমে তাসাউফ বহুবিধ তত্ত্বজ্ঞ্যান, কাশফ, আত্নোপলদ্বিজনিত প্রচুর জ্ঞ্যানসম্ভারে সম্মিলিত রূপ প্ররিগ্রহ করেছে। তবে এই ক্ষেএে ফরজে আইন বলতে কেবল ঐ অংশকে বুঝায়, যে অংশে ফরজ ও ওয়াজিব পর্যায়ে বাতেনী আমলের বিবরণ রয়েছে। 
যেমন- বিশুদ্ব আকায়েদ, সবর, শোকর, কানা'আত ইত্যাদি বিশেষ স্তর পর্যন্ত ফরজে আইন। পক্ষান্তরে গর্ব, অহংকার, হিংসা-বিদ্বেষ, কৃপণতা, দুনিয়ার মোহ ইত্যাদি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হওয়া। জাগতিক বৃত্তিসমুহ অর্জন করা, হারাম ও বর্জনীয় বিষয়াবলী বর্জন করা প্রত্যেক মুসলমানের উপর ফরজ। এসল বিষয়ের উপরই হলো ইলমে তাসাউফের মুল ভিত্তি যা ফরজে আইন।
ইসলামি পরিভাষায় তাসাওউফ বলতে অবিনশ্বর আত্মার পরিশুদ্ধি বা তাজকিয়ায়ে নফস এর মাধ্যমে আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে সাধনাকে বুঝায়।
মারূফ আল-কারখী বলেন : “তাসাউফ ঐশী সত্তার উপলব্ধি।”
কারো কারো মতে : “পরমত্মার সাথে জীবাত্মা মিল সাধন।”
আল কুরাইশী বলেন : “বাহ্য ও অন্তর্জীবনের পরিশুদ্ধিই হল তাসাউফ।”
জাকারিয়া আনসারী বলেন : “চিরন্তন ও নিখুঁত আনন্দ লাভের জন্য ব্যক্তিসত্তাকে শুদ্ধিকরণ, নৈতিক চরিত্রের উন্নতি বিধান এবং বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণ জীবনকে সঠিকভাবে গড়ে তোলাই তাসাউফ।”
তাসাউফ সম্পর্কে মাওলানা মওদুদী সাহেব ‘ইসলাম পরিচিতি’ নামক বইয়ে বলেছেন : “ফিকাহর সম্পর্ক হচ্ছে মানুষের প্রকাশ্য কার্যকলাপের সাথে। তার দৃষ্টান্ত হচ্ছে এই যে, আমাকে যেভাবে, যে পদ্ধতিতে কোন কাজ করার বিধান দেয়া হয়েছে, সঠিকভাবে তা করছি কিনা। যদি তা সঠিকভাবে পালন করে থাকি, তাহলে মনের অবস্থা কি ছিল তা নিয়ে ফিকাহর বলার কিছু নেই। মনের অবস্থার সাথে যার সম্পর্ক সে জিনিসটিকে বলা হয় তাসাউফ। (কুরআন শরীফে এ জিনিসটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘তাযকিয়া’ ও ‘হেকমত’। হাদীসে একে বলা হয়েছে ‘ইহসান’ এবং পরবর্তী লোকেরা একে অবিহিত করেছেন ‘তাসাউফ’ নামে।)।’’
হযরত ইমাম গায্‌যালী (রঃ) বলেছেন : ‘‘আল্লাহ্‌ ব্যতীত অপর সবকিছু থেকে হৃদয়কে পবিত্র (তাজকিয়ায়ে নফস) করে সত্য আল্লাহ্‌র আরাধনায় নিমজ্জিত থাকা এবং সম্পূর্ণরূপে আল্লাহ্‌তে নিমগ্ন হওয়ার অপর নামই তাসাউফ।’’
এখানে হযরত ইমাম গায্‌যালী (রঃ) ইসলামের মর্ম সঠিকভাবে উপলব্ধি করে ইসলামের তথা জীবনের বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীন দু’দিকের প্রতিই সমান গুরুত্ব আরোপ করে নৈতিকতাবোধ ও তাওহীদ প্রতিষ্ঠায় গ্লানি, আবর্জনা ও অন্তরায় সমূহকে পরিত্যাগের ইঙ্গিত দিয়েছেন।
হযরত জুনায়েদ বোগদাদী (রঃ) বলেন : ‘‘জীবন ও মৃত্যুসহ সকল বিষয়ে আল্লাহ্‌র উপর পরিপূর্ণ নির্ভরতাই তাসাউফ। আপনার অহংবোধকে যতক্ষণ জীবিত রাখা যাবে ততক্ষণ পরম জাত পাককে উপলব্ধি করা যাবে না। অহং প্রবৃত্তিকে বিনাশ করে তাকে পাওয়া যাবে। সর্বদা তারই রহমত ও সাহায্য আকাংখা করা ও তাকেই ভালোবাসার নাম তাসাউফ।’’
অন্যত্র হযরত বায়েজিদ বুস্তামী (রঃ) বলেছেন : ‘‘আরাম আয়েশ ত্যাগ করা এবং আল্লাহ্‌কে পাওয়ার উদ্দেশ্যে দুঃখ কষ্টকে বরণ করাই প্রকৃত তাসাউফ।’’
মূলত: তাদের জীবন আল্লাহর আদেশ এবং রসুল (স:)এর আদর্শের উত্তম প্রকাশ করা যায়। সুফিবাদ বা সুফী দর্শন একটি ইসলামিক এমন দর্শন যা আত্মা অবস্থা সম্পর্কিত আলোচনা মুখ্য বিষয়। আত্মার পরিশুদ্ধির বা তাজকিয়ায়ে নফস এর মাধ্যমে আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনই হলো এই দর্শনের মুলকথা। পরম সত্তা মহান আল্লাহ কে জানার এবং চেনার আকাঙ্খা মানুষের চিরন্তন। স্রষ্টা ও সৃষ্টির মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্ককে আধ্যাতিক ধ্যান ও কোর্আন হাদীসের জ্ঞানের মাধ্যামে জানার প্রচেষ্টাকে হল সূফী দর্শন বা সূফীবাদ।
বিভিন্ন সংজ্ঞা হতে এটাই প্রতিয়মান হয় যে, পবিত্র আত্মা লাভ এর জন্য সকল প্রকার কু-প্রবৃত্তি থেকে অহংবোধ বিনাস করে কুলুষমুক্ত ও সুন্দর, মনোরম জীবন গড়ে তোলাই সূফি জীবনের প্রাথমিক কর্তব্য ও প্রয়োজন। অত:পর যাহেরী ও বাতেনী উভয় জীবনের পরিপূর্ণ বিকাশ সাধানের মাধ্যমে আল্লাহ্‌র সম্যক উপলব্ধি ও তাতে স্থিতিলাভজনিত পরম শান্তিই সুফি দর্শনের চরম লক্ষ্য।
ভক্তি ও প্রেম ব্যতীত ইবাদতের এ অবস্থান সম্ভব নয়। তাই পরিপূর্ণ আত্মসমর্পনের মাধ্যমে প্রতিনিধিত্ব অর্জনপূর্বক আল্লাহ্‌র উপলব্ধি জাত জ্ঞান লাভ করে পরম সত্ত্বায় স্থিতি লাভ করার সৌভাগ্য অর্জন করা সুফী সাধনার মূল বিষয়বস্তু। অতএব বলা যায় যে, তাসাউফ একটা সাধারণ মানুষকে পরিপূর্ণ মানবতা দান করে আল্লাহ্‌র অনন্ত অসীম জ্ঞানে, জ্ঞানী করে গড়ে তোলো, যাদেরকে আমরা সুফী বলি। সুফি দর্শনের শিক্ষা তাই পরিপূর্ণরূপে মানবতারই শিক্ষা, পাশবিক স্তর হতে মানবতার স্তরে উন্নীত হবার শিক্ষা। তাসাউফ তাই মনুষত্ত্বের চরম শিক্ষা ও দর্শন।
ক্বলব শব্দের অর্থ অন্তর বা মন।এটি একটি মাংশের টুকরা।এর আকৃতি মসুর ডালের মত।বুদ্ধিকেন্দ্র ও জ্ঞান কেন্দ্র বুঝাতেও কখনও কখনও ক্বলব শব্দটি ব্যবহ্রত হয়।এর স্থান মানুষের বাম স্তনের ১ (এক) ইঞ্চি নীচে। অনেকে ক্বলব কে হৃদপিন্ড মনে করেন। আসলে এটা হৃদপিন্ড বা মস্তিস্ক নয় অন্য জিনিস। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বিরাও মনে করেন অন্তর বা মন হচ্ছে মানুষের বাম স্তনের নীচে। পবিত্র কোরআনে ক্বলবের অবস্থান সম্পর্কে এরশাদ হচ্ছে, “বস্তুত চক্ষুতো অন্ধ হয় না কিন্তু ঐ ক্বলব অন্ধ হয় যে ক্বলব হলো বুকের মধ্যে”। (সুরা হজ্ব ৪৬) রাসুল (সাঃ) ফরমান “নিশ্চই আল্লাহ তোমাদের শরীর বা আকৃতির দিকে তাকান না , বরং তিনি তোমাদের ক্বলবের (মন বা অন্তর) দিকেই তাকান”। অতপর রাসুল (সাঃ) ক্বলবকে দেখানোর জন্য স্বীয় আঙ্গুল দ্বারা নিজের বুকের দিকে ইশারা করলেন (মুসলিম শরীফ) । রসুল পাক(সাঃ) আরো বলেন,”মানুষের ক্বলব আল্লাহ পাকের অতুলনীয় ও আলৌকিক দুই আঙ্গুলের মধ্যে। তিনি অন্তর সমুহকে(ক্বলব) যেমন ইছ্ছা তেমনি করে দেন” । আল্লাহর কাছে দোয়া করার সময় রসুল পাক(সাঃ) বলতেন,”হে অন্তরের(ক্বলব) আবর্তন ও বিবর্তনকারী আল্লাহ ।তুমি আমাদের ক্বলবকে তোমার আনুগত্যমুখী করে দাও।” ক্বলব সম্পর্কে রাসুল পাক (সাঃ) আরো বলেন “ক্বলব হলো সমস্ত অঙ্গ প্রত্যঙ্গেঁর বাদশা” ( মেরকাত শরীফ ৫ম খন্ড, পৃষ্ঠা-৬২) অর্থাৎ একটি দেশের বাদশাহ ভাল হলে দেশের প্রজারাও যেমন ভাল হতে বাধ্য হয়, তদপ্রু একটি মানুষের ক্বলব বা অন্তর ভাল হলে নিজের কাজ কমর্ও ভাল হয়ে যায়। অপর দিকে একটি মানুষের ক্বলব খারাপ হলে তার কর্মকান্ডও খারাপ হয়ে যায়। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হচ্ছে ” তাদের ক্বলব সমুহের উপর ছাপ পড়ে গেছে। ফলে তারা বুঝে না।” ( সুরা তওবা, আয়াত-৮৭) । পবিত্র কোরআনে অন্যত্র এরশাদ হচ্ছে, “আমি তাদের ক্বলব সমুহের উপর ছাপ মেরে দিয়েছি। ফলে তারা শুনতে পায় না”(সুরা আ’রাফ-১০০)। সুতরাং দেখা যাচ্ছে ক্বলব যতটুকু ভাল তার আমলও তত ভাল আর যার ক্বলব যত নষ্ট ,তার আমলও তত নষ্ট বা খারাপ। পবিত্র কোরআনে আরও এরশাদ হচ্ছে “যে আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে আল্লাহ তার ক্বলবকে হেদায়াত দান করবেন”। (সুরা আন কাবুত ৯১)। অন্যত্র এরশাদ হচ্ছে যে রাসুল, তাদের জন্য দুঃখ করবেন না যারা দৌড়ে গিয়ে কুফরে পতিত হয়।যারা মুখে বলে আমরা ঈমান এনেছি, অথচ তাদের ক্বলব ঈমান আনেনি। (সুরা মায়েদা-৪১) । অন্যত্র কালাম পাকে এরশাদ হচ্ছে “কখনো না , বরং তারা যা কিছু (গোনাহ) উপার্জন করে তাই তাদের ক্বলবের উপর মরিচা ধরিয়ে দিচ্ছে”( সুরা মুতাফিফীন-১৩)। ক্বলবের মধ্যে এই মরিচা পড়তে পড়তে ক্বলব কাল হয়ে নষ্ট হয়ে যায়। তখন আর ভাল মন্দের হিতাহিত জ্ঞান থাকে না।রাসুল পাক (সাঃ) ফরমান “তখন ভালকে ভাল জানার এবং মন্দকে মন্দ জানার ক্ষমতা রাখেনা” ( মুসলিম শরীফ-১ম খন্ড, ৮২ পৃঃ) । তওবা ও এস্তে-গফার করে নেয় তাহলে তার ক্বলব ছাফ হয়ে যায় আর যদি গুনাহ বাড়তে থাকে তাহলে দাগও বাড়তে থাকে ও অবশেষে এটা ক্বলবকে ঘিরে ফেলে” (তিরমিজি শরীফ)। সুতরাং কলব থেকে ময়লা পরিষ্কার করতে হলে কলব সংশোধন করা আবশ্যক। কলব সংশোধন হয়ে গেলে গুনাহ করতে মন চাইবে না। গুনাহর প্রতি ঘৃনা সৃষ্টি হবে। গুনাহ করতে খারাপ লাগবে ও কষ্ট বোধ হবে । অপর দিকে ইসলামের দিকে চলতে মনে ভাল লাগবে ও উৎসাহ বোধ হবে।








0 comments:

Post a Comment

 
Copyright © . A-Tasauf is the holy place of Mind . - Posts · Comments
Theme Template by BTDesigner · Powered by Blogger